April 19, 2024
জাতীয়টেকনোলজিলেটেস্ট

ই-কমার্সে প্রতারণা বন্ধে কঠোর মনিটরিং করতে হবে: রাষ্ট্রপতি

সম্ভাবনাময় ই-কমার্স সেক্টরে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে মনিটরিং করতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কিছুসংখ্যক উদ্যোক্তা ই-কমার্সের নামে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনলাইনে এক ধরনের পণ্য প্রদর্শন করে ডেলিভারি দিচ্ছে নিম্নমানের বা অন্য পণ্য। অনেক সময় অর্ডার নিয়ে পেমেন্ট পাওয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে এবং অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহ হারাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু লোকের প্রতারণার জন্য যাতে ই-কমার্সের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাতের প্রসার কোনোভাবেই থেমে না যায় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হবে।

ই-কমার্সের ওপর ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, করোনার কারণে অনেক ক্রেতাই ঘরে বসে তাদের পছন্দের প্রয়োজনীয় পণ্যটি পেতে চান। ফলে অনলাইনে কেনাকাটা বহুগুণে বেড়ে গেছে। ই-কমার্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক খাত। ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ আগ্রহকে ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।

সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সাইবার ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেকসময় বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দেয়। তাই সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এই করোনা মহামারিকালেও দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবার প্রয়োজন আমরা নতুন আঙ্গিকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবে যখন স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রম তখন তথ্যপ্রযুক্তিই হয়ে ওঠে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবার একমাত্র নির্ভরশীল মাধ্যম। দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, বিচারিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং সেবা ইত্যাদি হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। চলমান মহামারির সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির স্থানীয় বাজার অকল্পনীয় প্রসার লাভ করেছে। এই মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।

ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, দেশের বিপুল শ্রমশক্তিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয় ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। আইসিটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। দেশে এখন স্যামসাংয়ের উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোন, সনির অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অ্যান্ড্রয়েড টিভিসহ বেশকিছু হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের যে সাহস দেখিয়েছেন সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইসিটি খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে তাদের আরও অনেক সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন তৈরি করছে রোবোটসহ নানাবিধ সমগ্রী। বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ও ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ফলাফল অর্জন করছে। এসব মেধাবী তরুণদের কাজে লাগিয়ে স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।

দেশ এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১’ এর মাধ্যমে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সবার কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *