ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে স্থায়ী আইনি কাঠামো তৈরি ও অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা জাসদের
একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে চলমান সংলাপের দ্বিতীয় দিনে নির্দিষ্ট ও স্থায়ী আইনি কাঠামো তৈরি এবং অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু)। আজ বিকেলে বঙ্গভবনে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এমপির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।
বিকেল চারটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ শেষে ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ দফা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তারপরেও উনি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের লক্ষ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন সেজন্য আমরা সাধুবাদ জানাই।’ তিনি বলেন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পরই সরকারকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে একটা স্থায়ী আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
অন্যদিকে অনুসন্ধান কমিটি করার জন্য রাষ্ট্রপতি সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন বলে তিনি মত দেন।
সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক সংস্থাসমূহ থেকে সদস্য নেয়া বাঞ্চনীয় বলে মত দেন এবং বলেন, এমন লোককে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন যাদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠাগুণ ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদের কথাও উল্লেখ করেন।
জাসদ সভাপতি বলেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয় । সরকারের নির্বাহী বিভাগ যাতে নির্বাচন কমিশনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংলাপের পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বাসসকে জানান, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় দিনে বঙ্গভবনে সংসদে অন্যতম বিরোধী দল জাসদের সাথে আলোচনায় বসেন ।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বঙ্গভবনে জাসদের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন নির্দিষ্ট আইন নেই। সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন। রাষ্ট্রপ্রধান দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সংলাপে অংশ নেয়া প্রতিনিধি সদস্যরা হলেন: জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, এমপি, কার্যকারী সভাপতি মোঃ রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মোশারেফ হোসেন, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আক্তার, এবং সহ সভাপতি সাবেক এমপি রেজাউল করিম তানসেন।
গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপে বসে রাষ্ট্রপতি হামিদ।
আগামী রবিবার বিকাল চারটায় সংলাপ হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথে এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর সাথে সন্ধ্যা ছয়টায়, সোমবার ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সন্ধ্যা ছয়টায় খেলাফত মজলিসের সাথে, ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে, ২৯ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল চারটায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ সাথে এবং ইসলামী ঐক্যজোট সাথে আলোচনা হবে ২৯ ডিসেম্বর রোজ বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায়।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
তিনি বলেন, সংলাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ।
সংলাপের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।