May 7, 2024
জাতীয়

ইসলাম বিতর্ক: তিন আসামির সবাই খালাস

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

চার বছর আগে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বইটির লেখক, ব-দ্বীপ প্রকাশনের প্রকাশক এবং ছাপাখানা মালিককে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার তথ্য-প্রযুক্তি আইনের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

খালাস পাওয়া তিনজন হলেন, ব-দ্বীপ প্রকাশনের সত্ত¡াধিকারী এবং ওই সঙ্কলন গ্রন্থের সম্পাদক শামসুজ্জোহা মানিক (৭৭), ছাপাখানা শব্দকলি প্রিন্টার্সের মালিক তসলিমউদ্দিন কাজল (৬০) এবং বইটির লেখক শামসুল আলম চঞ্চল (৫৮)। চঞ্চল  প্রকাশনা সংস্থাটির মালিক মানিকের ভাই। মামলায় তাকে বদ্বীপের বিপণন শাখার প্রধান বলা হয়েছে।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শামসুজ্জোহা মানিক বলেন, মামলাটি ছিল সম্পূর্ণভাবে হয়রানিমূলক। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন নিরেপেক্ষ লেখনীকে স্তব্ধ করতে এই অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, এই রায়ে সেটাই প্রমাণিত হল।

২০১৬ সালে একুশে বইমেলা চলাকালে ব-দ্বীপ থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটি নিয়ে ইন্টারনেটে সমালোচনায় মুখর হয় ডানপন্থি একটি মহল। ওই বইয়ে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার মতো লেখা আছে- এমন অভিযোগে ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে বইমেলা থেকে বইটির সব কপি জব্দ করে পুলিশ।

পাশাপশি ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো উপাদান’ আছে কি না- তা অনুসন্ধানে গিয়ে কাঁটাবনে ব-দ্বীপ প্রকাশনের দপ্তর থেকে আরও পাঁচটি বইয়ের সব কপি জব্দ করা হয়। সেসব বইয়ের মধ্যে ছিল ‘আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা’, ‘জিহাদ: জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার’, ‘ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নের সমস্যা’, ‘ইসলামে নারীর অবস্থা’ এবং ‘নারী ও ধর্ম’।

এসব বই ‘বঙ্গরাষ্ট্র ডট ওআরজি’ নামের একটি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। সে কারণে শাহবাগ থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনে এই মামলা করেন এস আই মো. মাসুদ রানা। বইমেলায় ব-দ্বীপের স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মামলা হওয়ার পর শামসুজ্জোহা মানিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কয়েক মাস পর তারা জামিনে মুক্তি পান।

তাদের আইনজীবী পারভেজ হাসেম বলেন, মামলায় শামসুল আলমকে বইমেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলা হলেও তা সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য হল, অনবরত হত্যার হুমকি পেয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করাতে গিয়েছিলেন। সেখানে  অপেক্ষমান অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের ওই ভূমিকার প্রতিবাদে সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ‘লেখক-প্রকাশক-পাঠক-জনতা’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়। মুখে কালো কাপড় বেঁধে সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

মামলা হওয়ার ছয় মাস পর ওই বছর ২১ অগাস্ট তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন শাহবাগ থানার তখনকার পুলিশ পরিদর্শক জাফর আলী বিশ্বাস। অভিযোগপত্রের সঙ্গে তিনটি জব্দ তালিকা জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ গঠনের পর মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন সাক্ষ্য দেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের জন্য ১৬টি তারিখ রাখা হলেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাননি।

আসামিপক্ষের জেরায় জব্দ তালিকার একজন সাক্ষী বলেন, পুলিশ বই জব্দ করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার স্বাক্ষর নিয়েছে, তবে তিনি বইয়ের নাম জানেন না। একজন নারী সাক্ষী বলেছেন, তিনি জব্দ তালিকায় স্বাক্ষরই করেননি, অথচ তাকেও সাক্ষী করা হয়েছে। আর মামলার বাদী জেরার উত্তরে বলেন, তিনি তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হয়েছেন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *