ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ইব্রাহিম খালেদের পদত্যাগ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পদত্যগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই ডেপুটি গভর্নর আদালতের নির্দেশেই অনিয়মের কারণে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
ইব্রাহিম খালেদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি গতকাল (রোববার) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।”
পদত্যাগ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছি। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তাছাড়া ওখানে যে ধরনের সমস্যা সেটা তো আমাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না। সেখানে যদি ব্যাংকিংয়ের সমস্যা থাকত বা ব্যবস্থাপনার সমস্যা থাকত তাহলে আমারা অভিজ্ঞতা দিয়ে ঠিক করতে পারতাম।”
টাকা ফেরত চেয়ে আইএলএফএসএলের ৭ বিনিয়োগকারীর করা মামলার শুনানি করে বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি পি কে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাই, এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ মোট ২০ জনের পাসপোর্ট জব্দের আদেশ দেয়।
স্বরাষ্ট্র সচিবকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়, যাতে ওই ব্যক্তিরা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারেন। এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয় আদেশে।
পাশাপাশি বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত ওই ২০ জনের নগদ অর্থ, গাড়ি, মজুদসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোনো ব্যক্তি বা সত্তার কাছে হস্তান্তর না করতে নির্দেশ দেয়।
সেই সঙ্গে আদালত আইএলএফএসএলের এর স্বাধীন পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেয়।
আদালতের ডাকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে কোম্পানির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে নিজের মতামত উপস্থাপন করেছিলেন ইব্রাহিম খালেদ।
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিলোপ, অপসারণ, নতুন নিয়োগ বা পুনর্গঠন করা হলে হয়ত ওই কোম্পানিটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে ওইদিন বলেছিলেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটিতে কি ধরনের সমস্যা রয়েছে জানতে চাইলে ইব্রাহিম খালেদ সোমবার বলেন, “ওখানে ঢোকার পরে আমি যেটা জানলাম সেটা হয়তো হাই কোর্ট জানেন না। ধরুন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস মানুষকে ঋণ দিয়েছে সাড়ে তি হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৬০০ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে পি কে হালদার অ্যান্ড গ্রুপ।
“প্রতিষ্ঠানটি খুবই ভালো ছিল। একজন ভালো লোক এটার চেয়ারম্যান ছিলেন, তাকে জোর করে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেওয়া হল। চেয়ার কিনে জবরদস্তি করে প্রতিষ্ঠানটি দখল কর হয়। তারপরে তিন বছরের মধ্যে লুটপাট করে টাকা পয়সা নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “শোনা যায় যে পি কে হালদার এখন কানাডাতে পালিয়ে আছে।এখন লুট করা উদ্ধার করা তো ব্যাংকারের কাজ না, এটা তো দুদকের কাজ। আমি সরে গেলে পথটা পরিষ্কার হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইন করতে পারবে। একজন প্রশাসক বসিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি দুদককে খবর দেয় তাহলে হয়তো কাজ হবে। আমাকে তো কেউ খবর দেবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করতে পারবে এ কারণে আমি সরে গেলাম।”
অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে পৌনে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) একটি মামলা করেছে।