November 27, 2024
ফিচার

আস্ত বিমান খেয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড!

ফরাসি শিল্পী মিশেল লোটিটো। ১৯৫০ সালে ফ্রান্সের গ্রেনোবেল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

এই শিল্পীর একটি কীর্তি বিশ্ব বিখ্যাত। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলেছেন আস্ত একটি বিমান চিবিয়ে খেয়ে।

গিনেস বুকে তার নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রেঞ্জ ডায়েট। তার অবশ্য একটি কারণও আছে। সাধারণ সিদ্ধ খাবার কিংবা ফল খেলে তার নাকি পেট খারাপ হত। অথচ ভাঙা সাইকেল বা লোহা যেকোনো ধাতব জিনিস দিলে তা অনায়াসে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারতেন তিনি। ঠিক যেন স্ন্যাক্স খাচ্ছেন।

সাধারণ মানুষ এ ধরনের খাবার খেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। অথচ মিশেল সাইকেল, টেলিভিশন, শপিং ট্রলি মুহূর্তের মধ্যেই খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারতেন। মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই ধরা পড়ে, ধাতব জিনিসের প্রতি তার আসক্তি। হঠাৎ একদিন ভাঙা গ্লাসের টুকরো নিমেষে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। তারপর থেকেই অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় এক একটি গ্লাস ভেঙে খাওয়া।

তার অদ্ভুত হজম ক্ষমতা ছিল। কিন্তু সেদ্ধ খাবার খেলেই গোলমাল হত শরীরে। ১৯৬৬ সালে যখন মিশেলের মাত্র ১৬ বছর বয়স তখন প্রকাশ্যে আসেন ধাতব বস্তু খাওয়ার প্রদর্শনী নিয়ে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন তার এই অদ্ভুত কীর্তি দেখতে। বিশ্ববাসী যেন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল তার প্রতিভায়।

জনসমক্ষে একের পর এক কামড়ে খেতেন বাইসাইকেল, টিভি, কফিন প্রভৃতি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মিশেল প্রায় নয় টন ধাতব পদার্থ খেয়েছেন। যদিও প্রতিবার খাওয়ার আগেই তিনি প্রচুর পরিমাণে পানি কিংবা মিনারেল অয়েল খেয়ে নিতেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত, মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তিনি ‘সেসনা ১৫০’ নামক একটি বিমান চিবিয়ে খান। ধীরে ধীরে তার এই খাওয়ার নেশাটা পেশায় পরিণত হয়। মিশেলের খাদ্য তালিকায় থাকতো ১৮টি সাইকেল, সাতটি টিভি সেট, দুটি বিছানা, ১৫টি ট্রলি, একটি কম্পিউটার, একটি কফিন, এক জোড়া স্কি এবং ছয়টি ঝাড়বাতি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মিশেলের এই খাদ্যাভ্যাস এক ধরনের অসুখ। যাকে বলা হয় পিকা রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অযোগ্য খাদ্যবস্তুর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। সেই তালিকায় রয়েছে চুল, মাটি, নানান ধাতব পদার্থ, কাঁচ প্রভৃতি। এই বিষয়টি অত্যন্ত অবান্তর মনে হলেও অত্যন্ত বাস্তব একটি ঘটনা। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা মিশেলের পেটের এক্স-রে করেন এবং প্রতিদিন ৯০০ গ্রাম ধাতু হজম করার ক্ষমতাকে অনন্য বলে বর্ণনা করেন।

যিনি অতি সহজেই নয় টন পর্যন্ত ধাতব পদার্থ খেয়ে ফেলতে পারতেন তিনি আবার কলা বা ডিম সেদ্ধ হজম করতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার পর তাকে যে পিতলের স্মারক দেওয়া হয়েছিল সেটিও দিব্যি হজম করে ফেলেছিলেন মিশেল। ২০০৭ সালে ২৫ জুন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এই ধাতব মানুষের মৃত্যু ঘটে। তবে আজও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন আস্ত একটি প্লেন চিবিয়ে খেয়ে ফেলার জন্য।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *