আল কায়েদা নেতা মাসরিকে ‘অগাস্টেই হত্যা করেছে ইসরায়েলি চররা’
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার প্রভাবশালী এক নেতাকে তিন মাস আগেই ইসরায়েলি চররা ইরানে হত্যা করেছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংবাদমাধ্যম শুক্রবার তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, আবু মোহাম্মদ আল মাসরি নামে বেশি পরিচিত আবদুল্লাহ আহমেদ আবদুল্লাহকে গত ৭ অগাস্ট তেহরানের রাস্তায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ইসরায়েলি চর গুলি করে হত্যা করে।
আল কায়েদার ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ মাসরিকে ১৯৯৮ সালে আফ্রিকার কেনিয়া ও তানজানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দূতাবাসে বোমা হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হয়। আয়মান আল জাওয়াহিরির পর তিনিই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীটির পরবর্তী শীর্ষ নেতা হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে ইসরায়েলি চররা তাকে হত্যা করেছে বলে অনুমান করা হলেও হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক কী ধরনের ভূমিকা ছিল তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আল-কায়েদা এখন পর্যন্ত মাসরির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। ইরানের কর্মকর্তারাও ঘটনাটি চেপে গিয়েছিলেন।
ইসরায়েল বা অন্য কোনো দেশের সরকারও এখন পর্যন্ত মিশরীয়-বংশোদ্ভূত এ জঙ্গিনেতাকে হত্যার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন এক কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন; হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছ থেকে এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
আল-কায়েদার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাসরির সঙ্গে তার মেয়েও সেদিন ইসরায়েলি চরদের হামলায় নিহত হন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মাসরির এ মেয়ে ছিলেন আল কায়েদার সাবেক শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজার বিধবা স্ত্রী।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিযানে নিহত হন।
মাসরি ২০০৩ সাল থেকে ইরানের ‘হেফাজতে’ থাকলেও তেহরানের উপকণ্ঠে ২০১৫ থেকেই তাকে অবাধে বসবাস করতে দেখা যাচ্ছিল বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে সুন্নি মুসলিম জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বিরোধ দীর্ঘদিনের হলেও মার্কিনি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা পরিচালনার স্বার্থে তেহরান মাসরি ও তার মেয়েকে অবাধে চলাচলের সুযোগ দিয়েছিল বলে ধারণা যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকর্তাদের।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ৭ অগাস্ট তেহরানের স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে মাসরি তার বাড়ির কাছেই মেয়েকে নিয়ে নিজের সাদা রংয়ের রেনল্ট এল৯০ সিডান গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ব্যক্তি তার গাড়ির পাশে এসে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল থেকে মাসরি ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করে গুলি করে।
ঘটনার পর ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, গুলিতে হাবিব দাউদ নামে লেবাননের এক ইতিহাসের অধ্যাপক ও তার ২৭ বছর বয়সী মেয়ে মরিয়ম নিহত হয়েছে।
লেবাননের সংবাদভিত্তিক চ্যানেল এমটিভি ও ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে দাউদ হিজবুল্লাহর সদস্য ছিলেন বলে জানানো হয়।
পরে ইরানঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন লেবানিজ কর্মকর্তা জানান, তারা এর আগে কখনোই হাবিব দাউদ নামে কারও নাম শোনেননি। লেবাননের সংবাদমাধ্যমে সেসময় দেশটির ইতিহাসের কোনো অধ্যাপকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন কিছু দেখা যায়নি।
লেবাননের সব ইতিহাসের অধ্যাপকের তালিকায় প্রবেশাধিকার রয়েছে এমন এক গবেষক জানিয়েছেন, হাবিব দাউদ নামে কোনো নথি তিনি দেখেননি।
মাসরির মৃত্যু আল-কায়েদার কর্মকাণ্ডে কী প্রভাব ফেলবে তাৎক্ষণিকভাবে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার দুই দশকের মধ্যেই বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হারালেও মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান ও পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গি এ গোষ্ঠীটি এখনও বেশ সক্রিয়।