April 25, 2024
খেলাধুলা

আর্জেন্টিনার নেপথ্য নায়ক স্কালোনি

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ ফাইনাল ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর দারুণ ভাবে ঘুড়ে দাড়িয়ে ফাইনালে উঠেছে দলটি।

দলের ফাইনালে ওঠায় মেসি বন্দনায় মেতেছে পুরো বিশ্ব। তার আলোতে ঢাকা পরেছে দলের কোচ লিওনেল স্কালোনির কৃতিত্ব। ফাইনাল ম্যাচের আগে দলের মাস্টার মাইন্ড লিওনেল স্কালোনির গল্পে নজর দেয়া যাক।
রাশিয়া বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পর লিওনেল স্কালোনিকে যখন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়, অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাও কড়া সমালোচনা করেছিলেন। সেই স্কালোনির হাত ধরেই এখন বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে প্রয়োজন মাত্র একটি জয়ের।

আজ ফাইনাল ঘিরে সকলের আলোচনায় লিওনেল মেসি। তবে স্কালোনি না থাকলে আজ আর্জেন্টিনা দলে না-ও থাকতে পারতেন মেসি। তিন বছরে তিনটি ফাইনালে হারের পর ২০১৬ সালে যখন জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন মেসি, খবরটি স্কালোনি বিশ্বাসই করতে পারেননি। মেসিকে ফেরানোর জন্য সব চেষ্টাই করেছিলেন তিনি। মেসিকে তার অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য রাজি করাতে ওই সময়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন স্কালোনি। পরে আবার জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরেন মেসি।

গত কয়েক বছরে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সবচেয়ে চমকপ্রদ গল্পগুলির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে এই স্কালোনির হাত ধরে। আর্জেন্টিনা দলকে তিনি তুলে নিয়েছেন অন্য উচ্চতায়।

২০১৮ সালের অগাস্টে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) যখন স্কালোনিকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব দেয়, তখন ফেডারেশনের যুব কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তখনকার ৪০ বছর বয়সী স্কালোনির পূর্বে প্রধান কোচ হিসেবে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

২০১৫ সালে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরের বছর স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ায় হোর্হে সাম্পাওলির সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন স্কালোনি। পরের বছর সাম্পাওলি যখন আর্জেন্টিনায় জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান, স্কালোনিও চলে আসেন তার সঙ্গে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় আর্জেন্টিনার, ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। ছাঁটাই করা হয় সাম্পাওলিকে।

এএফএ খুঁজতে থাকে নতুন কোচ। একে একে প্রস্তাব দেওয়া হয় দিয়েগো সিমেওনে, মার্সেলো গায়াদো ও মারিসিও পচেত্তিনোকে। রাজি হননি তারা কেউ। স্থায়ী কোচ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে স্কালোনিকে দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ফেডারেশনের ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিল না অনেকেই। প্রয়াত মারাদোনা তো স্কালোনির সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন।

চার দিকে সমালোচনার মাঝেই সাবেক সতীর্থ পাবলো আইমার, ওয়াল্টার সামুয়েল ও রবের্তো আয়ালাকে সহকারী হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করেন স্কালোনি। এরপর তার হাত ধরে শুরু হলো দলে সংস্কার প্রকল্প। দিন গড়াতে থাকল, নিজেকে প্রমাণ করতে থাকলেন স্কালোনি।

মেসিকে ছাড়াই দায়িত্বের প্রথম ছয় প্রীতি ম্যাচের চারটি জেতেন স্কালোনি। পরে পেয়ে যান স্থায়ী দায়িত্ব। মেসিকেও পেয়ে যান দলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও দৃঢ় হয় দুজনের বন্ধন। মেসি আবার উপভোগ করতে শুরু করেন জাতীয় দলে খেলা।

২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। দুই বছর পর সেই ব্রাজিলকেই তাদের মাটিতে ফাইনালে হারিয়ে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টটির শিরোপা ঘরে তোলে তারা। দেশের হয়ে মেসি পান প্রথম শিরোপার স্বাদ। কেটে যায় তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। মেসিও হয়ে যান অনেকটা ভারমুক্ত।

বছর না ঘুরতেই তারা ‘ফিনালিসিমা’ নামে আরেকটি ট্রফির স্বাদ পায় ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে। তিন বছরের বেশি সময়ে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে দলটি পা রাখে কাতারে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারে বড় ধাক্কা লাগে। তবে সেটিই আরও শক্তিশালী করে তোলে দলকে। এরপর টানা পাঁচ জয়ে উঠে আসে ফাইনালে।

আর্জেন্টাইনদের কাছে স্কালোনিও এখন প্রিয়, ভালোবাসার মানুষ। ১৯৭৮ সালে সেসার লুইস মেনতি ও ১৯৮৬ সালে কার্লোস বিলার্দো কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ঠাঁই পেয়ে গেছেন দেশটির ইতিহাসে। সেই অর্জন থেকে স্কালোনি এক ধাপ দূরে। আজ ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে স্কালোনির নামও।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *