May 3, 2024
আন্তর্জাতিক

আমেরিকা থেকে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন আরও ১৫০ জন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর পদক্ষেপের কারণে করোনাকালে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে আমেরিকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।

যে কোনোদিন দেড় শতাধিক প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো হতে পারে আমেরিকা থেকে। আর সেজন্য তাদের আরিজোনায় জড়ো করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৫ জুন ৮৩ বাংলাদেশিকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় ট্রাম্প সরকার।

দালালকে মোটা টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের পর তারা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

এলডিপির কয়েকজন বাদে সবাই নিজেদের বিএনপি, যুবদল কিংবা ছাত্রদলের সংগঠক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এসাইলাম অফিসারের কাছে ইন্টারভিউ শেষে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সবাইকে। এর মধ্যে বেশ ক’জন প্যারলে মুক্তি পেলেও বাকিরা ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারেই রয়েছেন।

অর্থাৎ মোটা অর্থে এটর্নি নিয়োগের পর ইমিগ্রেশন কোর্টের শর্ত অনুযায়ী জামিনের বন্ড দিতে পারেননি তারা। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় ডিটেনশন সেন্টারের আরো অনেক অবৈধ অভিবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশিরাও পড়েছেন মহাসংকটে। যারা এটর্নি নিয়োগ করতে পেরেছিলেন, তারা এ করোনার মধ্যেই প্যারলে মুক্তি লাভ করেছেন। করোনার প্রকোপ চরমে উঠলে এপ্রিলের শুরুতেই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকশ’ অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের কোর্টে হাজিরার তারিখসহ নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর মধ্যে কোনো বাংলাদেশি ছিলেন না। কারণ, বাংলাদেশিদের অধিকাংশকেই টেক্সাস অথবা আরিজোনা কিংবা আলাবামা স্টেটে রাখা হয়েছে। খুব কম সংখ্যক রয়েছেন নিউজার্সি এবং ফ্লোরিডা ডিটেনশন সেন্টারে।

জানা গেছে, মেক্সিকো সীমান্ত পথে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের এসাইলামের আবেদন প্রথম ইন্টারভিউতে বিবেচিত না হলেই দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার একটি রুলিং ২৫ জুন ইউএস নবম সার্কিট আপিলেট কোর্ট দিয়েছেন। এতে সেন্ট্রাল আমেরিকার লোকজনের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের একটি অংশ অর্থাৎ ৮৩ জনকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আরো ১৫০ জনকে যে কোনো সময় বিমানে উঠিয়ে দেয়া হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট সবার জাতীয়তা নিশ্চিত হতে হবে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে।

দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমদ ৩ জুলাই এ প্রসঙ্গে জানান, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রায়ই আটক বাংলাদেশিদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়। তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা সেটিও নিশ্চিত হতে চায়। এর আগে ৮৩ জনকে বহিষ্কারের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আগের সপ্তাহে বহিষ্কৃতদের মতো তাদের বাড়িও নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা এবং রাজশাহী অঞ্চলে। একেকজন ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা করে দালালকে দিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পথে অতিরিক্ত খরচও হয়েছে খাবার অথবা অন্য কোনো বিশেষ প্রয়োজনে। তাদের প্রায় সবাই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে এসাইলাম প্রার্থনা করলেও অধিকাংশই ছিলেন বেকার এবং পৈত্রিক সহায়-সম্পদ বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না এটর্নি নিয়োগসহ মামলা পরিচালনার অন্যান্য খরচের অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায়। যাদের তেমন সামর্থ্য ছিল, তারা অনেক আগেই প্যারলে মুক্তি পেয়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে কাজে যোগদান করেছেন।

নিউইয়র্কের এটর্নি মঈন চৌধুরী এসব বাংলাদেশি প্রসঙ্গে বলেন, ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর নীতির কারণে এসাইলাম পাবার সম্ভাবনা ক্রমান্বয়ে কমছে। বিশেষ করে যারা মেক্সিকো হয়ে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন, তাদের প্রথম ইন্টারভিউতেই এসাইলাম অফিসারকে কনভিন্স করতে হয় যে দেশে ফিরিয়ে দিলে নির্ঘাত মৃত্যু অথবা বর্বরোচিত আচরণের শিকার হতে হবে ক্ষমতাসীন সরকার অথবা সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে।

ডেমক্রেটিক পার্টির নেতা এটর্নি মঈন চৌধুরী আরো বলেন, এজন্য অনেকের মামলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নভেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত। ওই নির্বাচনে ডেমক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হলেই সব জট অপসারিত হবে বলে আশা করছি।

অশোক কর্মকার নামে অপর এক এটর্নি বলেন, সম্প্রতি যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের কেউই আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন না। আমার ক্লায়েন্টদের সবাই নিরাপদে আছেন। কারণ, তারা পরবর্তী শুনানির তারিখ পেয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ রুলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসাইলামের পেন্ডিং আবেদনগুলোর ভাগ্য বিবর্ণ বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। সেটি একেবারেই সঠিক নয়।

এ দুই এটর্নি বলছেন, ওই রুলিংয়ের ভিকটিম তারাই হবেন বা হচ্ছেন, যারা বেআইনি পথে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর এসাইলাম অফিসারকে কনভিন্স করতে পারেননি যে দেশে ফিরিয়ে দিলেই তারা বর্বরতার শিকার হবেন। যাদের আবেদন বিচারাধীন, তারা ওই রুলিংয়ের আওতামুক্ত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *