আবরার হত্যা: পলাতক চার আসামিকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে আদালত। এ হত্যাকাণ্ডে ২৫ জনকে আসামি করে গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম সোমবার পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামিরা হলেন- এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)। তাদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না সে বিষয়ে আগামী ৩ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
ওই দিন বা তার আগেই এ মামলার নথিপত্র বিচারের জন্য দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাঝহারুল ইসলাম।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে বলেছিলেন, আবরার হত্যা মামলার বিচার হবে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে। সেই গেজেট হলে জজ আদালত থেকে মামলার নথি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।
পরদিন আবরারের বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে।
পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে।
আবরারকে কীভাবে ক্রিকেট স্টাম্প আর স্কিপিং রোপ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয়েছিল, সেই ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে এসেছে তাদের জবানবন্দিতে।
আবরারকে সেদিন সন্ধ্যার পর ওই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ভোরে চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া আগে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, রাত ১০টার পরে আবরারকে নির্যাতন করা শুরু হয় এবং রাত ২টা ৫০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে যদি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হত তাহলে হয়তো এমন পরিণতি হত না।
বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে ফেসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠে এলে ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
আবরারকে কেবল শিবির সন্দেহে ডেকে নেওয়া হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল- সেই প্রশ্ন মনিরুল সেদিন বলেন, একক কোনো কারণে নয়, শিবির করে এটি একটি মাত্র কারণ। ওরা এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
ছোটখাটে বিষয়ে কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করলে, কিংবা কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বললে, কিংবা সালাম না দেওয়ার কারণেও এই র্যাগিংয়ের নামে, মানে অন্যদেরকে, নতুন যারা আসবে, তাদের আতঙ্কিত করে রাখার জন্যই তারা এই কাজগুলো করে অভ্যস্ত।
আবরারকে নির্যাতনে ব্যবহৃত পাঁচটা ক্রিকেট স্ট্যাম্প, একটি স্কিপিং রোপ, দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিডি, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ এ মামলার আলামত হিসাবে রাখা হয়েছে। অভিযোগপত্রে মোট ৩১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাদীপক্ষের ৬ জন ছাড়াও বুয়েটের সাতজন শিক্ষক, ১৩ জন শিক্ষার্থী এবং ৫ জন কর্মচারী রয়েছেন।