May 2, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

‘আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল খুলনায় গ্রেফতার জঙ্গিদের’

দ. প্রতিবেদক
খুলনায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক ড. মোঃ আতিকুস সামাদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অপর আসামি হাসান জবানবন্দি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি প্রদান করা আসামি হলো পশ্চিম বানিয়াখামার নাজিরঘাট এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নাসিম। একই এলাকার মো. খোকন মোল্লার ছেলে হাসানের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল থেকে আদালত পাড়ার নিরাপত্তা জোরালো করা হয়। প্রবেশমুখে বসানো হয় চেকপোস্ট। সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসামি নাসিমকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে প্রবেশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৮ বছর আগে এক বড় ভাই নাসিমদের ইসলামের দাওয়াত দেয়। এরপর তাদের কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা দেয়। তারপর তারা জঙ্গি কার্যকালাপে জড়িয়ে পড়ে। আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা প্রায় শেষের পথে ছিল। কিন্তু ঢাকায় সাম্প্রতিক তাদের এক সাথী আটক হওয়ার কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, যা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে খুলনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন ময়লাপোতা মসজিদ এলাকা থেকে গত সোমবার রাতে নাসিম ও হাসান নামের ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এই দুজন বোমা ও আইইডি তৈরির কারিগর। তাঁরা অনলাইনে ও অফলাইনে খুলনা এলাকায় আনসার আল ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের সময় নাসিম ও হাসানের কাছ থেকে বোমা ও আইইডি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে হাতে লেখা দাওয়াতি লিফলেট, চাঁদা আদায়ের রশিদ, ডায়েরি, সদস্য সংগ্রহের ফরম, আনসার আল-ইসলামের কালার লিফলেট, সদস্যদের নির্দেশনা লিফলেট, বই, স্মার্টফোন ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার নাসিমের বাড়ি খুলনা মহানগরীর পূর্ব বানিয়াখামার নাজিরঘাট রোডে। তিনি লবণচরা থানার মোহাম্মদনগর এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। হাসানের বাড়ি শরিয়তপুরের সখিপুর থানার খাসগাজীপুর গ্রামে। তিনিও লবণচরা থানার মোহাম্মদনগর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ কর্মকর্তা তাপস কর্মকার বলেন, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী এবং ধর্মীয় উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। তাঁরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী মতবাদ প্রচারণা এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে সদস্য সংগ্রহ, দাওয়াতি কার্যক্রম, সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা আদায় এবং নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। তাঁরা আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী বিভিন্ন বই বিতরণ করতেন। আগ্রহীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা এবং তাঁদের উগ্রবাদের দিকে আহ্বান করার কাজ করছিলেন।
এছাড়া তাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার এবং আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করার উদ্দেশ্যে বোমা তৈরির সরঞ্জাম নিজেদের হেফাজতে রাখতেন নাসিম ও হাসান। তাপস কর্মকার বলেন, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন করায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সোমবার রাতে সিআইডি গ্রেপ্তারের পর আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য নাসিম ও হাসানকে লবণচরা থানায় হস্তান্তর করে। দু’জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়, যার নং ১৪।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *