September 13, 2025
ফিচারলাইফস্টাইল

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়

‘যদি তুমি মনে করো তুমি পারবে তাহলে সেটাই সত্যি এবং যদি তুমি মনে করো তুমি পারবে না তাহলে সেটাও সত্যি। এখন তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি কোনটা করবে- হেনরি ফোর্ড।

‘যদি তুমি মনে করো তুমি পারবে তাহলে সেটাই সত্যি এবং যদি তুমি মনে করো তুমি পারবে না তাহলে সেটাও সত্যি। এখন তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি কোনটা করবে- হেনরি ফোর্ড।

জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন যখন সামনে চলে আসে, ঠিক তখনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস না থাকলে জীবনে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। এভারেস্টজয়ী এডমন্ড হিলারি এ কারণেই বলেছেন, আমরা পর্বত জয় করি না, জয় করি নিজেকে। পাঠক চলুন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে নিজেকে জয় করার কৌশলগুলো এবার জেনে নিই।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন অনেকেই আছেন যারা কারণে-অকারণে একটু উচ্চস্বরে কথা বলেন। এবং এরা যখন কথা বলেন তখন কন্ঠে আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে। ফলে এরা দ্রুত অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। তখন তাদের কথা সবাই শোনার চেষ্টা করে। অন্যদিকে যারা স্বল্পভাষী হন, মৃদুস্বরে কথা বলেন, তাদের অনেক কথা আমরা শোনার আগ্রহ দেখাই না। কেননা সে কথাগুলোতে বক্তার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি ফুটে ওঠে না। তাই আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে আপনাকে সবসময় দৃঢ়কণ্ঠে কথা বলতে হবে। কন্ঠস্বরে ফুটিয়ে তুলতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

আবার অনেকেই আছেন, যারা কথা বলেন এমনিতেই কম, তার ওপর শ্রোতার চোখে চোখ রেখে বলতে পারেন না। কেমন যেন একটা সংকোচ, লজ্জা এসে তাকে আড়ষ্ট করে ফেলে। এটাও কিন্তু আত্মবিশ্বাস কম থাকার লক্ষণ। চাকরির ইন্টারভিউয়ের কথাই ভাবুন। ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনি যদি প্রশ্নকর্তার মুখোমুখি বসে তার চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন তাহলে চাকরি পাওয়ার আশা বৃথা। প্রশ্নকর্তা বুঝে যাবেন, হয় আপনি ভুল বলছেন অথবা আপনার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং আলাপচারিতা, কথোপকথন ইত্যাদির সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। দেখবেন আপনি তখন অনেকটা আত্মবিশ্বাস  ফিরে পাবেন।

একই কথা হাঁটাচলা কিংবা হাসির বেলায়ও খাটে। এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অধিকাংশ আত্মবিশ্বাসী ব্যাক্তি দ্রুত হাঁটাচলা করেন। কেননা তিনি জানেন তার গন্তব্য কোথায়। তিনি সঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছাতে চান। হাসির বেলায়ও এ কথা বলা যায়। যারা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকেন তারা প্রাণখুলে হাসেন। অতএব আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে এ বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

এ তো গেল বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাপার। এর বাইরেও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলার জন্য জরুরি। জ্ঞানের পরিধির কথা বলা যাক। আপনার যদি জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত না থাকে তাহলে কিন্তু আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে না। হীনম্মন্যতা আপনাকে কুরে কুরে খাবে। যদি আপনি নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে সবার সামনে তুলে ধরতে চান, তাহলে জ্ঞানভান্ডার আপনার বাড়াতেই হবে। উগান্ডার প্রেসিডেন্টের নাম হোক কিংবা পাশের বাড়ির সমাজসেবী, জ্ঞানী ব্যক্তির নাম, ছোট-বড় সব ধরনের জ্ঞানই আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। এজন্য পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজের মানুষের সাথে আপনাকে মিশতে হবে। সবার সাথে মন খুলে সব বিষয়ে কথা বলতে হবে। বন্ধুদের আড্ডায় তাল মিলিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলেই বাড়বে জ্ঞানভান্ডার। সেইসাথে আত্মবিশ্বাস।

সবার সাথে মিশতে হলে আপনার পরিচয়ের গন্ডি বাড়াতে হবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আমি কেন আগ বাড়িয়ে সবার সাথে পরিচিত হতে যাব? এ চিন্তা ভুল। কারণ আপনি নিজেকে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চান, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে চান, এবং সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান। চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্তত দুজন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে। তাদের সাথে বাক্যবিনিময় করুন। তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে বা রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এক্ষেত্রে আপনি শুধু মনে রাখবেন, আপনার উদ্দেশ্য হলো তাদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা।

আরেকটি ব্যাপার, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সমস্যা থেকে পালিয়ে গেলে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরবে। আপনি যা কিছুকেই ভয়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন সাহস করে তার মুখোমুখি হোন। শুধু লেখাপড়ার ক্ষেত্রে নয়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এর মোকাবিলা করে সেখান থেকে আপনাকে বিজয়ী হতেই হবে। এসব ক্ষেত্রে সমালোচনা অথবা পরাজয়কে ভয় পাবেন না। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখুন মহাত্মা গান্ধীর সেই অমর বাণী- যদি মনে-প্রাণে বিশ্বাস থাকে কাজটি আমি করতে পারব, কাজের শুরুতে সেটি সম্পন্ন করার শক্তি বা সামর্থ্য না থাকলেও একসময় তা অর্জিত হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *