November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

আগস্টে আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল করতে, এলসি মার্জিনকে শতভাগে উন্নীত করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশ। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও ছিল নিম্নমুখী প্রবণতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে এলসি পেমেন্ট হয়েছে ৫.৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাসের ৭.৪২ বিলিয়নের চেয়ে অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার আশঙ্কায় প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে এবং অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এলসি মার্জিন আরোপ করায় এলসি পেমেন্ট ধীরে ধীরে কমে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।

নতুন গভর্নর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা এখন কাজ করছে। আগস্টে আমদানিকারকরা ৫.৩১ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছেন, যা আগের মাসের ৬.২২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬.৮৫ বিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে ৬.৫৫ বিলিয়ন, মার্চে ৭.৬৭ বিলিয়ন, এপ্রিলে ৬.৯৩ বিলিয়ন, মে মাসে ৭.২৫ বিলিয়ন এবং জুনে ৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার। জানা গেছে, কোভিড-পরবর্তী দেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানি বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে রয়েছে।

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় রেকর্ড ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলারে। একইসময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতিও ১৮.৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডলারের ঘাটতিতে থাকা এমন ব্যাংকগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকায় ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। গত বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ডলার সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলাসবহুল পণ্যের পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমাতে এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। একইসময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, যাতে জরুরি সরকারি আমদানি নিষ্পত্তিতে তা ব্যবহার করা যায়।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৪৭ দিনে ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিলাসবহুল পণ্যসহ আরও ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নতুন যানবাহন কিনতে নিষেধ করা হয়েছে। বেসরকারি একটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গড়ে ১০৫ টাকায় ডলার কিনছি। তাই এলসি নিষ্পত্তিতে ১০৬ টাকা পর্যন্ত চার্জ করেছি। এ ছাড়া ডলারের দাম কিছুটা কমিয়েছে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। সর্বোচ্চ ১১০ টাকায় হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্স ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে বাজারে এখনো ডলার সংকট রয়েছে। ডলারের ঘাটতি থাকলেও আগামী কয়েকদিনে ডলারের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তত দু’টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানরা। তারা বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে ডলারের দাম কমিয়েছে। খোলাবাজারে ডলারের দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১২ টাকায়।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *