April 26, 2024
আন্তর্জাতিক

আইএস সংশ্লিষ্টতা: ১৪০ জনকে খুঁজছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

মধ্যপ্রাচের জঙ্গি দল আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৪০ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে খুঁজছে দেশটির পুলিশ। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শ্রীলঙ্কার কিছু তরুণ ২০১৩ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে শ্রীলঙ্কার ১৪০ জন নাগরিক এইএসের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য খুঁজছে।

আইএস ইতোমধ্যে ইস্টার সানডের হামলার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে আটজনকে ওই জঙ্গি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আইএসের দাবি, ওই আটজনই সেদিন আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে, হামলায় এক নারীসহ মোট নয়জনের অংশ নেওয়ার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে, তাদের সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

প্রাথমিকভাবে স্থানীয় দুই উগ্রপন্থি ইসলামিক দল ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) ও জমিয়াতুল মিল­াতু ইব্রাহীমকে ঘিরে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হলেও সংগঠন দুটি শ্রীলঙ্কার বাইরে থেকে সহযোগিতা পেয়েছে বলে মনে করছে দেশটির সরকার। এক্ষেত্রে আইএস এর জড়িত থাকার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডের সকালে তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলে একযোগে ওই আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ২৫৩ জন নিহত হন, আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ। এক দশকের মধ্যে ভয়ঙ্করতম ওই আত্মঘাতী হামলার পর ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। পুরো দেশে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য।

ভারতের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো। দেশটির পুলিশ প্রধান (আইজিপি) পুজিথ জয়াসুন্দরাও ইস্তফা দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা।

হামলার পর শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হরিণ ফার্নান্দো টুইটারে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেটা সপ্তাহ দুই আগে শ্রীলঙ্কা পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) হাতে এসেছিল।

ওই নথিতে বলা হয়, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন গির্জা ও ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে। এনটিজের নেতা মোহাম্মদ জাহরানের নামও সেখানে উলে­খ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে আসা ওই সতর্কবার্তা তাকে দেখানো হয়নি। পরদিন তিনি প্রতিরক্ষা সচিব ও আইজিপিকে পদ ছাড়ার নির্দেশ দেন বলে খবর দেয় রয়টার্স।

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা শুক্রবার বলেন, তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের সময়ের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সরকার সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর দেশের গোয়েন্দা নজরদারি ব্যবস্থায় দুর্বলতা তৈরি হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা কিছুদিন আগে বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে অন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি বিক্রমাসিংহেকে আবার প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরিয়ে আনেন।

শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বৈরথের ফলে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে চান না। কোনো কিছু ঘটলেই সেজন্য পরস্পরকে দায়ী করেন তারা।

তামিল গেরিলাদের সঙ্গে যুদ্ধের অবসানের পর গত দশ বছরে বৌদ্ধপ্রধান শ্রীলঙ্কায় সা¤প্রদায়িক সহাবস্থানের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, খ্রিস্টানদের গির্জা আক্রান্ত হওয়ার পর তা আবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে ৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইউসুফ ইব্রাহীমও রয়েছেন। তার দুই ছেলে সেদিন আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেয় বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।

রয়টার্স লিখেছে, শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু মুসলমানরা এখন পাল্টা সা¤প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বোমার ভয়ের পাশাপাশি গ্রেপ্তার-হয়রানি এড়াতে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন অল সিলোন জমিয়াতুল উলামা শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরেই প্রার্থনা করার পরামর্শ দিয়েছে।

ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিতও একই ধরনের আহŸান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টানদের উদ্দেশে। পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত গির্জায় সমবেত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কলম্বোতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে আরও হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *