অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অগ্নি পরীক্ষায় ইংল্যান্ড
ক্রীড়া ডেস্ক
দ্বাদশ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আগামীকাল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মোকাবেলা করবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অগ্নি পরীক্ষার এ ম্যাচে দীর্ঘ চার বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে ইংলিশদের।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। এমন হতাশাজনক ঘটনাটি দলের ওয়ানডে ম্যাচের ধরন নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করেছিল ইংল্যান্ডকে। যাতে তারা সফলও হয়েছে। মুলত এরপর ওয়ানডেতে ‘নিজস্ব ঘরানার’ ক্রিকেট খেলতে শুরু করে ইংলিশরা। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভর বেলিস কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিতে শুরু থেকেই ছক কষা শুরু করেন। এতে দলের পরিবর্তনটাও এসেছে চোখে পড়ার মত। ইয়োইন মরগানের দারুন নেতৃত্বে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ স্থান দখল করে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর দারুণ নৈপুন্যে বড় রান সংগ্রহকে আবর্তন করেই ইংলিশরা এগিয়ে গেছে। এখন তাদের চাওয়া সেমিফাইনাল নয় শিরোপা।
ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠতে পারলে বিনা মূল্যে বৃটেনে ম্যাচটি স¤প্রচার করবে বলে ঘোষনা দিয়েছে স্বাগতিক স্যাটেলাইট স¤প্রচারক স্কাই স্পোর্টস।
রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বকাপে সর্বশেষ সাত আসরের কোন সেমিফাইনালেই হারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে ২০ বছর আগে এজবাস্টনে দক্ষিন আফ্রিকার সঙ্গে টাই করেছিল তারা। যদিও রান রেটে এগিয়ে থাকার কারণে ওই ম্যাচ থেকে ফাইনালের টিকিট পায় অস্ট্রেলিয়া।
এবারো মানসিকভাবে এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কারণ চলমান টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে গত মাসে লর্ডসে তারা এ্যাশেজ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে ৬৪ রানে অসিরা। দুই পেসার বাঁ-হাতি জেসন বেহরেনডর্ফ ও মিচেল স্টার্কের ভাগাভাগি করে ৯ উইকেট শিকারের পর অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ ইংলিশ বোলারদের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছেন শতক।
ম্যাচটিতে অবশ্য ইংলিশ দলের হয়ে খেলতে পারেননি তাদের ‘সৌভাগ্যবান’ ক্রিকেটার জেসন রয়। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বিশ্রামে থাকতে হয়েছে তাকে। তবে সুস্থ হয়ে তার ফেরার পরই বদলে যায় ইংল্যান্ড দলের চেহারা। পরের দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গুরুত্বপুর্ন জয় এনে দিয়েছেন তিনি। যার সুবাদে শেষ চার নিশ্চিত হয় স্বাগতিক দলের।
পক্ষান্তরে ২০০১ এ্যাশেজ টেস্টের পর এজবাস্টনে কোন ফর্মেটের ক্রিকেটেই জয় নেই অস্ট্রেলিয়ার। শুধু তাই নয়, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিন আফ্রিকার কাছে বিষ্ময়করভাবে ১০ রানে হেরে গেছে তারা। স্টার্ককে মানিয়ে নেয়ার পথ খুঁজতে থাকা ইংল্যান্ডের লক্ষ্য থাকবে অসি টপ অর্ডারের রানের গতিকে প্রতিহত করা।
বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে ১২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ব্যাটিং তান্ডব শুরু করেছেন অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন ৬৩৮ রান। তারপরও ইংলিশ পেসার লিয়াম প্লুনকেট মনে করেন ম্যাচে তারা আরো উজ্জিবীত থাকবেন। তিনি বলেন,‘ চার বছর ধরে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলছি। র্যাংকিংয়ের এক নম্বরে উঠে এসেছি। নিজেদের দিনে আমরা যে কোন দলকেই হারাতে পারব বলে মনে করি।’
এদিকে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েছেন উসমান খাজা। তার পরিবর্তিত হিসেবে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের একাদশে ডাক পেয়েছেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপে সরাসরি অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে তার । ব্যাটিং লাইন-আপ শক্তিশালী করতেই হ্যান্ডসকম্বকে ডাকা হয়েছে।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। গতকাল ল্যাঙ্গার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে সত্যি কথাই বলতে চাই। অবশ্যই পিটার খেলছে এবং এটা শতভাগ সত্যি। এটা তার প্রাপ্য। প্রাথমিক দলে তার সুযোগ না পাওয়াটা ছিল দূর্ভাগ্য। এই মুহূর্তে দারুন ছন্দে আছে হ্যান্ডসকম্ব। অস্ট্রেলিয়া-এ’ দলের হয়েও সে ভাল খেলেছে। মিডল অর্ডারে তাকে পেয়ে দলের ভারসাম্য ফিরে এসেছে।’
ল্যাঙ্গার আরো নিশ্চিত করেছেন খাজার বদলী হিসেবে দলে এসেছেন ম্যাথু ওয়েড। তবে তার জন্য আইসিসি’র টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ল্যাঙ্গার বলেন, ঘরোয়া আসরে ওয়েড দারুনভাবে নিজেকে প্রমান করে চলেছেন। যদি সে দলে সুযোগ পায় তবে অভিজ্ঞতার নিরিখে বলাই যায় তার ব্যপারে আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী।
এদিকে পিঠের ইনজুরিতে ভোগা মার্কোস স্টয়নিস অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা সুখবর দিয়েছেন। নেটে তিনি নিজেকে ফিট প্রমান করেছেন।
সোমবার অনুশীলনে খেলোয়াড়দের খালি পায়ে পুরো মাঠ হাঁটতে দেখা গেছে, ল্যাঙ্গার নিজেও এই সময় খেলোয়াড়দের সাথে হেঁটেছেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘বিষয়টি চমৎকার। ম্যাথু হেইডেন ও আমি প্রতি টেস্ট ম্যাচের আগেই এটা করতাম। অনেকটা কুসংষ্কার থেকেই আমরা এটা করতাম। আসলে গত এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের দিকে তাকালে দেখা যাবে কি ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হয়েছিলাম। এটা শুধুমাত্র আমাদের ক্রিকেটকে নয়, পুরো দেশকেই প্রভাবিত করেছিল। তবে কঠোর পরিশ্রম করে আমরা আবারো পুরনো জায়গায় ফিরে এসেছি। ভাল ক্রিকেট উপহার দেয়াই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।’
অস্ট্রেলিয়া: এ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, এ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স, নাথান কালটার নাইল, মিচেল স্টার্ক, এডাম জাম্পা, জেসন বেহরেনডর্ফ, নাথান লিঁয়, শন মার্শ, কেন রিচার্ডসন, পিটার হ্যন্ডসকম্ব।
ইংল্যান্ড: ইয়োইন মরগান (অধিনায়ক), মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, টম কারান, লিয়াম প্লানকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, জেমস ভিন্স, জোফরা আর্চার।