অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে হাঁটছে সৌদি!
আশ্চর্যজনকভাবে দিনে ১৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরবসহ তেল উৎপাদন করা ২৩ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ওপেক প্লাস। বলা হয়েছিল, এই পদক্ষেপটি তেলের বাজারের স্থিতিশীলতা অর্জনের একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, এর মাধ্যমে সৌদি আরব একটি অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করার চেষ্টা করছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীন থাকবে।
তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা বিস্ময়করভাবে এসেছে। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে সৌদি ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে সে হিসেবে এটা কিছুটা কম।
মে মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। গত অক্টোবরেই এ স্বেচ্ছা উৎপাদন কমানোর বিষয়টিতে সবাই সম্মত ছিল। রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, দিনে তারা ৫ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। ইরাক তাদের উৎপাদন কমাবে দিনে ২ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল।
অন্যান্য দেশগুলোও উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিদিন এক লাখ হাজার ব্যারেল, কুয়েত প্রতিদিন এক লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল, ওমান প্রতিদিন ৪০ হাজার ব্যারেল, আলজেরিয়া প্রতিদিন ৪৮ হাজার ব্যারেল উৎপাদন কমাবে। এছাড়া কাজাখিস্তান প্রতিদিন ৭৮ হাজার ব্যারেল তেল কম উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যার কারণে একটি স্বাধীন অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি।
আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের হেড অব কমোডিটি স্ট্র্যাটেজি হেলিমা ক্রাফ্ট বলেছেন, সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর না করে একটি অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে চলেছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে সৌদি। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনে যুক্ত হতে চলেছে দেশটি। যেখানে আছে রাশিয়াও।
এছাড়া চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে হাঁটছে মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশ। অন্যদিকে চীনা কোম্পানি রংশেং পেট্রোকেমিক্যালের ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য ৩৬০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিও করেছে রিয়াদ। এর আওতায় প্রতিদিন ৪ লাখ ৮০ হাজার ক্রুড তেল সরবরাহ করবে সৌদি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে বিশ্ব অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে সৌদি এসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মার্কিন সম্পর্কের পট বদল হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বের মেরুকরণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের বিশ্ব অংশীদারিত্বে এমন বৈচিত্র্য আনছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
সৌদি লেখক আলি শিহাবি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একমুখী সম্পর্কের দিন শেষ। এখন আমরা আরও উন্মুক্ত সম্পর্কের পথে হাঁটছি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন, ভারত ও ফ্রান্সসহ অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী। ’