অভিজিতের খুনিদের তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় দণ্ডিত দুই পলাতক খুনি কিংবা ছয় বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের তথ্যের জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ (আরএফজে) প্রোগ্রাম সোমবার এ পুরস্কারের ঘোষণা দেয়।
আরএফজের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার যোগসূত্র থাকার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে তিনি বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে হামলার শিকার হন অভিজিৎ। জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন; বন্যার হাতে আঙুল কাটা পড়ে।
সেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরের মাথায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ হত্যার রায় দেয় আদালত।
তাতে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলার আরেক আসামি উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জনের মধ্যে জিয়া ও আকরাম শুরু থেকেই পলাতক।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে জিয়া, সায়মন, আবু সিদ্দিক, আকরামকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায়েও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম।
তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশের ভাষ্য। তাকে ধরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস (আরএফজে) প্রোগ্রাম তাদের ঘোষণায় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎকে হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে আহত করার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের তথ্যের জন্য দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার।
ওই হামলার বিচারে ছয়জনের সাজা হওয়ার কথা তুলে ধরে ঘোষণায় বলা হয়, তাদের মধ্যে দুজন সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন বিচারের সময় পলাতক ছিলেন এবং এখনো আছেন।
“জিয়া, আকরাম কিংবা জড়িত অন্য কারও তথ্য থাকলে সিগন্যাল, টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিচের নম্বরে (+1-202-702-7843) বার্তা পাঠান। এরপর আপনি পুরস্কার পেয়েও যেতে পারেন।”
আরএফজে বলছে, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা এখনও বাংলাদেশে রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
পুরস্কার ঘোষণা নিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, “তদন্ত কাজ চলছে এবং যাতে এই জঘন্য সন্ত্রাসী আক্রমণে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা যায়, সেজন্য তথ্য চাওয়া হচ্ছে।”