অনুকরণ নয়, উদ্ভাবনে মনোযোগ দিতে হবে: রাষ্ট্রপতি
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অনুকরণের পরিবর্তের উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রযু্ক্তি হচ্ছে উন্নয়নের বাহন। তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এর ফলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও অগ্রগতির অপার সম্ভাবনার পাশাপাশি বহুমুখী চ্যালেঞ্জেরও সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে প্রযুক্তি দ্রুত পরিরর্তিত হচ্ছে। এমনকি অনেক প্রযুক্তি অচল হয়ে যাচ্ছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণের কাছে ফলপ্রসুভাবে পৌঁছে দিতে হলে আমাদেরকে নতুন ও পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অনুকরণের পরিবর্তে উদ্ভাবনে আমাদেরকে মনোযোগী হতে হবে।”
শনিবার চতুর্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। রাজধানীর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে ওই অনুষ্ঠানে এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের কার্যক্রম রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হয়। সেই থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ইশতেহারকে স্মরণীয় করে রাখতে গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালন করে আসছে আইসিটি ডিভিশন। এবার এর চতুর্থ আসর। এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যদিও মানছি দূরত্ব, তবুও আছি সংযুক্ত’।
অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট সকল সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বুদ্ধিমত্তা ও নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার দিক থেকে আমাদের যুবসমাজ যথেষ্ট দক্ষ ও উদ্যোগী। তাই তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে এরাই দেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।”
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টর এখন যথেষ্ট শক্তিশালী ও বিস্তৃত। তাই আমি আশা করবো সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।”
মহামারীকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মুজিব শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আমাদের একইসাথে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দুনিয়া বদলে দেওয়া করোনা মহামারী মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে করোনা মহামারীর এই কঠিন সময়ে দূরে থেকেও আমরা পরস্পর সংযুক্ত থাকতে পারছি। কমে আসছে গ্রাম-শহরের দূরত্ব। তাই, আজকের এই সময়ে চতুর্থবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপযাপনের এই আয়োজন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমাদের নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে সফলতার পথ ধরে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের পথে আরও সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে পারবো এ প্রত্যাশা করছি।”
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অবদান রাখার জন্য ১৫ জন ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পীদের একটি নাটিকার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ। আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম।