April 19, 2024
জাতীয়

৩৪ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ‘আসছে বিপুল বিনিয়োগ’

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সৌদি আরবের দুই মন্ত্রীসহ ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও বিমান চলাচলসহ অনেকগুলো খাতে বড় বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, সৌদি প্রতিনিধি দলের এই সফরে অন্তত ১৬টি প্রকল্পে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করছেন তারা।
বুধবার ঢাকায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহকে পাশে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশার কথা শোনান। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে, বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় কলেবরের প্রতিনিধিদের সফর হচ্ছে এটা। তারা ৩০ বছর আগে ইসলামী ব্যাংকে একটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করেছিল।
সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী মাজেদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কাসাবি এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মেজইয়ে আলতাইজরি নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বিশেষ ফ্লাইটে মধ্যরাতে ঢাকা আসছে। প্রতিনিধি দলের অর্ধেক সদস্যই সৌদি আরবের বেসরকারি খাতের, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি আরামকো-এর মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রতিনিধিরাও থাকছেন এই দলে। সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নেতৃত্বাধীন এই তহবিলের অর্থের পরিমাণ আড়াইশ বিলিয়ন কোটি ডলার। সৌদির এই প্রতিনিধি দল ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপেও যোগ দেবেন। গেল মাসেই ক্রাউন প্রিন্স ভারত, পাকিস্তান ও চীন ঘুরে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করছে সৌদি আরব।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় তাদের বিনিয়োগ ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ পৌঁছে গেছে। এখন তারা পূর্বের দিকে ঝুঁকেছে এবং বাংলাদেশ এর জন্য সবচেয়ে সঠিক জায়গা। সৌদি আরব বাংলাদেশে জ্বালানি, তেল পরিশোধনাগার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, সৌর বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত এবং এখনও প্রতিমাসে ২০ হাজারের বেশি মানুষ দেশটিতে যাচ্ছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
গত সাড়ে তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দফায় রিয়াদে রাষ্ট্রীয় সফরের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। স¤প্রতি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়েছে, যাতে ইয়েমেন সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন সরাতে সৌদি আারবকে সহযোগিতা করবেন বাংলাদেশি সেনারা।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, সৌদি আরবের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি দলের এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ‘নতুন উঁচ্চতায়’ পৌঁছাবে। বৃহস্পতিবারই বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হবে বললেও সেগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দুটি সৌদি কোম্পানির প্রতিনিধিরা আসছেন। তারা বায়োমেডিকেল প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে। তারা ময়মনসিংহ ও জামালপুরে বাংলাদেশি টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচের অন্যান্য দেশে নিয়োগের সুযোগ করে দেবে।
তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বায়োমেডিকেল টেকনিশিয়ান নেয়। প্রতি বছর তারা চার হাজার বাংলাদেশি টেকনিয়ানকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে কাজের যোগ্যতা সম্পন্ন বলে সনদ দেবে। বিমান চলাচল খাতে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও অন্যান্য সেবার অবকাঠামো তৈরিতে তারা বিনিয়োগ করবে।
আমাদের নিজেদের উড়োজাহাজের জন্য সার্ভিস সাপোর্ট দরকার এবং আমরা এই সাপোর্ট অন্যান্য দেশকেও দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রী নিজেদের দেশে এটা করতে চেয়েছেন এবং সেই কারণে আমরা এই প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। লালমনিরহাটে এই সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে এবং উড়োজাহাজের সেবায় এটা আন্তর্জাতিক মানের একটি ফ্যাসিলিটি হবে।
এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, একবার তৈরি করা গেলে অন্যান্য দেশও তাদের উড়োজাহাজ মেরামতের জন্য এখানে পাঠাবে। এছাড়া ১০ কোটি ডলারের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ফেনীতে করা হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *