April 20, 2024
আঞ্চলিক

সুন্দরবন অভ্যন্তরে শেষ হয়েছে গোলপাতা আহরণ মৌসুম

 

কয়রা প্রতিনিধি

সুন্দরবন অভ্যন্তরে শেষ  হয়েছে গোলপাত আহরন মৌসুম। কোন প্রকার হয়রানী ছাড়াই গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরে বাওয়ালীরা এখন মহাব্যস্ত বিক্রির কাজে। গোলপাতা আহরণের লক্ষমাত্রা নিয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের ২টি ক‚পে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সন্দেহীন ছিল বন বিভাগ। সেই আশাংকা থেকে বের হয়ে তাদের লক্ষমাত্রা পৌছাতে পেরেছে। এ বার ভালভাবে গোলপাতা কাটতে পেরে বেজায় খুশি বাওয়ালীরা। নির্বিঘেœ পাতা কাটতে পেরে বাওয়ালীরা খুশীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে,গোলপাতা আহরণের ভরা মৌসুমে এবার বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কঠোর ছিল বন বিভাগ। ফলে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা সংকটে বাওয়ালীরা খানিকটা দেরীতে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ২ টি ক‚প(জোন) থেকে অনুমতি গ্রহণ করে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পরেও সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে গোলপাতা কাটতে পেরেছে এ উপর নির্ভরশীল প্রায় কয়েক হাজার শ্রমজীবি মানুষ।

খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ আবু সালেহ বলেন, বাওয়ালীরা যাতে বন অভ্যন্তরে নির্বিঘেœ গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বন বিভাগ থেকে বরাবরের মত এবারও কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়। চলতি বছর সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে  গোলপাতা কুপে গোলপাতা সংগ্রহের জন্য ২৭৪ টি বিএলসির অনুক‚লে বাওয়ালিরা ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫শ’ ৬১ মণ গোলপাতা সংগ্রহ করার অনুমতি (পারমিট)  নিয়েছিল। তবে বন বিভাগের কঠোর নজরদারির কারনে কোন প্রকার ঠেসপাতা, মাইজপাতা নষ্ট না করে নিয়মমাফিক গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরেছে বাওলীরা। সুন্দরবন খুলনা বিভাগের বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অলিয়ার রহমান (মিলন) বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি থেকে এ সকল বিএলসির অনুকুলে পারমিট দেওয়া শুরু হয় এবং গোলপাতা আহরণ মৌসুম ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলে। তবে প্রথমে ধারণা করা হয় এবার ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় শুরুতেই গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা। লক্ষ্যমাত্রা পুলন হওয়ায় বন বিভাগও খুশি। খুলনা গোলপাতার ক‚প কর্মকর্তা মোঃ সুলতান মাহমুদ হাওলাদার বলেন, নিয়ম মেনেই গোলপাতা আহরণের অনুমতি দেওয়া  হয়। আর আমাদের নিয়ম মেনে বাওয়ালীরা এ বছর গোলপাতা কাটায় তারা লাভবান হবে

বন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, বরাবরের মত এবারো গোলপাতা আহরণের ক্ষেত্রে বাওয়ালীদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫০০ মণের বেশি ধারণ ক্ষমতার নৌকা বিএলসির বাইরে থাকবে। গোলপাতা আহরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় বনে অবস্থান করা যাবে না, আহরণের সময় বনবিভাগের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে হবে,গোলপাতা ঝাঁড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনো ভাবেই কর্তন করা যাবে না এবং গোলপাতার আঁড়ালে যাতে কোনো ধরণের ‘বনজদ্রব্য পাচার না হয় সে বিষয়টি নিবিঢ়ভাবে নীরিক্ষণ পূর্বক নিশ্চিত করতে হবে। সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার সুতির খালধার এলাকার বাওয়ালী নুর ইসলাম সানা জানান, ২০ বছর ধরে তিনি সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবে বন বিভাগের এবারকার মত কড়াকড়ি আগে কখনও দেখেননি। একই উপজেলার খুচরা গোলপাতা ব্যবসায়ী সোলাইমান হাওলাদার বলেন, আগের মত এখন আর গোলপাতার চাহিদা নেই। বিক্রি কম হওয়ায় অনেক খুচরা বিক্রেতাদের গেল বছরের গোলপাতা এখনো রয়ে গেছে। তবে বাওয়ালীদের অনেকে বলেন, গোলপাতায় যে পরিমাণ টাকা লগ্নি করতে হয়, সে তুলনায় ব্যবসা হয়না। তাই বাওয়ালীদের সহজ শর্তে আগের মত এখন আর টাকা লগ্নি করতে চাননা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বা মহাজনরা। এত কিছুর পরেও বাপ দাদার ব্যবসা ধরে রাখতে চেষ্ঠা করছে এ সাথে সংশ্লিষ্টরা।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশিরুল আল-মামুন জানান, সুন্দরবনের উপর থেকে অব্যাহত চাপ কমাতে বনজদ্রব্য আহরণ সীমিত করা হয়েছে। তিনি  প্রতিটি স্টেশনে ও ক‚পে নিয়মিত তদারকি করে বিএলসি নবায়ন করার অনুমতি দিয়েছেন এ বছর। পাশাপাশি ক‚পে বিএলসির সাথে সংশ্লিষ্ট নৌকার মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কেউ যাতে মলম বাণিজ্য করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি রাখার কথা বলেন তিনি। তবে গোলপাতা সম্পর্কে কোন অভিযোগ  ছাড়াই শেষ হয়েছে গোলপাতা মৌসুম বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *