সাতক্ষীরা রেঞ্জ আবারও অশান্ত করে তুলেছে বনদস্যু মিকাইল বাহিনী
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
কাগজে কলমে সুন্দরবন দস্যু মুক্ত ঘোষণা হলেও কার্যত কাগজে কলমে ও গনমাধ্যমের প্রচারেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বৃহৎ অস্ত্র ভান্ডারের উলেখযোগ্য সংখ্যক বনদস্যু বাহিনী স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসার প্রতিশ্রæতিতে আত্মসমার্পন করেন। কিন্তু প্রশাসনের কড়া নজরদারী এড়িয়ে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে আজ ও রয়ে গেছে ডজনখানের ছিচকে বনদস্যু বাহিনী। এদের কাছে ভারী বা উন্নত কোন আগ্নেওঅস্ত্র না থাকলেও সামান্য পাইপগান বা দেশীয় তৈরী অস্ত্র দিয়ে সাধারন বনজীবিদের কুপকাত করা কঠিন কোন বিষয় না। এসব ছিচকে বনদস্যু বাহিনী বেছে নিয়েছে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকা। এ বাহিনীগুলির মধ্যে অল্প কিছুদিন পূর্বে আত্মপ্রকাশ করা শ্যামনগর উপজেলার বনদস্যু কারখানা খ্যাত সুন্দরবন বেষ্টিত দীপপলী গোলাখালীর মৃতঃ ছিয়ামউদ্দীন মোল্যার পুত্র মিকাইল বাহিনী। কালিঞ্চী, পার্শ্বেখালী, গোলাখালী, যতিন্দ্রনগর, নতুনঘেরী ও টেংরাখালী গ্রামের বনজীবিদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে- সকলের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রæতিতে সরকারের কাছে আত্মসমার্পনকারী গোলাখালী পলীর জামির আলী মোল্যা (জামু) এর আপন ছোট ভাই দুধর্ষ মিকাইল। এই মিকাইল ৫/৬ মাস পূর্বে এলাকা ছেড়ে ভারতে অবস্থান করে। ভারতে অবস্থান কালে মিকাইলের বন্ধু ৩/৪ বছর পূর্বে ভারতে পাড়ি দেওয়া একই পলীর আলী মিস্ত্রীর পুত্র শুকদেব এর সাথে কোলকাতার অনতি দুরে অবস্থান করত। ঐ শুকদেব কে নিয়ে বর্তমানে ৬ সদস্যের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। এই বাহিনী নিয়ে গত ১সপ্তাহে সাতক্ষীরা রেঞ্জে মাহমুদা নদী সংলগ্ন পশুরতলা, মাইটভাঙ্গা, রুচোখালী এবং কালিন্দী নদী সংলগ্ন কচুখালী সহ দাইয়ের গাং, বৈকারী, জোনাবখালী ও হরিনটানা এলাকায় বনজীবিদের উপর মুক্তিপনের দাবিতে সীমাহীন বর্বরচিত নির্যাতন চালাচ্ছে। এলাকার সকল বনজীবিরা বাহিনী প্রধান মিকাইল ও সঙ্গী বন্ধু শুকদেবকে সহজে চিনতে পেরেছে। এদের কবল থেকে কৌশলে ফিরে আসা জেলেরা জানায়, মিকাইল ও শুকদেব ছাড়া অন্য সদস্যরা সকলে ভারতের। এদের কাছে আছে মাত্র ৩টা দেশী তৈরী বন্দুক সাদৃশ্য পাইপগান ও কয়েকটি রামদা। বনজীবিরা আরো জানায়, মিকাইল নিজেকে কখনও কখনও জোনাব বাহিনীর সদস্য বলেও পরিচয় দেই। গত ৩দিন পূর্বে কালিন্দী নদী সংলগ্ন কচুখালী খালে মাছ ধরার সময় মিকাইল বাহিনী ৬ জন জেলেকে জীম্মি করে এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপনের দাবিতে বেধড়ক মারপিট করে মারাত্মক আহত করে। আটক জেলেদের মধ্যে কয়েকজনকে মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। বনজীবিরা বলছে, লোকালয়ে থাকা মিকাইলের গডফাদাররা মোবাইল করে আটক বনজীবিদের কাউকে কাউকে নির্দিষ্ট করে ছেড়ে দিতে বলে। বেধড়ক মারপিটের শিকার মিকাইলের কবল থেকে ফিরে আসা টেংরাখালী গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র বাশার, নতুনঘেরী গ্রামের শহর আলী মোল্যার পুত্র শহীদ, কালিঞ্চী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র মনির ও যতিন্দ্রনগর গ্রামের সুলতান গাজীর পুত্র আলিম জানায়, তারা কচুখালী খালে মাছ ধরার সময় মিকাইল নিজেই তাদের মুক্তিপনের দাবিতে জিম্মী করে এবং বাহিনী প্রধান মিকাইলের মোবাইল দিয়ে আত্মীয় স্বজনদের কাছে প্রত্যেকের জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে।
এ সময় মিকাইল ও শুকদেব দুজনই তাদেরকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করে এবং তাদের ডাক চিৎকার মোবাইলে আত্মীয় স্বজনকে শোনায়। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার মিকাইল বাহিনী বৈকারী খাল থেকে মাছ ধরার সময় পার্শ্বেখালী গ্রামের নওশাদ গাজীর পুত্র মোবারক গাজী (৪৫), টেংরাখালী গ্রামের মৃত তমিজউদ্দীন গাজীর ছেলে সাত্তার গাজী সহ কয়েক জেলেকে মুক্তিপনের দাবিতে আটক করে এবং আজও পর্যন্ত মোবারক মিকাইল বাহিনীর কবজায় আটক রয়েছে। কৌশলে ফিরে আশা জেলে পার্শ্বেখালী গ্রামের ইমাম আলী জানায়, মিকাইল নিজেকে জোনাব বাহিনী সদস্য পরিচয় দেয়। কিন্তু তার বাহিনীতে ৫/৬ জন সদস্য রয়েছে মাত্র। সে আরও জানায়, জেলেরা মিকাইলকে চিনতে পারলেও কোন ওজুর আপত্তি খাটে নাই। মিকাইল নিজে তাদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দিয়েছে।
ফিরে এসে বনজীবিরা বিষয়টি বিশিষ্ট জনদের মাধ্যমে স্থানীয় রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব থাকা এস আই বোরহান উদ্দীন ও বনবিভাগের কৈখালী ষ্টেশন কর্মকর্তা কামরুল ইসলামকে জানিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় নৌ-পুলিশ ও বনবিভাগ সহ কোষ্টগার্ডকে সার্বিক বিষয় জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে বনদস্যু মিকাইল বাহিনীর কবলে আটক বনজীবিদের উদ্ধারের তৎপরতা দেখা যায়নি। এভাবেই চলতে থাকলে বনজীবিদের পেশা বন্ধ হবে। সাথে সাথে সরকার বঞ্চিত হবে রাজস্ব আয় থেকে।