July 27, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সাতক্ষীরায় চামড়া কিনে বিপাকে ব্যবসায়ীরা : লোকসানের আশঙ্কা, সীমান্তে কড়া নজরদারি

আব্দুল গফুর, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও ক্রয়কৃত একটি চামড়াও বিক্রি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে মসজিদ ও মাদ্রাসায় সংরক্ষিত দানকৃত চামড়াও। এদিকে ভারতে চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরার ২৩৮ কিলোমিটার সীমান্তে কড়া নজরদারি রেখেছে বিজিবি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৭ হাজার গরু কোরবানি হয়েছে। আর ছাগল কোরবানি হয়েছে ৩৪ হাজার। গরুর চামড়ার সরকারি রেট ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে। আর ছাগলের চামড়ার রেট ধরা হয়েছে ২২ টাকা বর্গফুট দরে।
সরেজমিনে জানা যায়, চামড়া কেনায় সরকারি রেট মানা হয়নি কোথাও। তিন থেকে সর্বোচ্চ ৬শ’ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ছাগলের চামড়া বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদ ও কওমী মাদ্রাসার তহবিলে গরুর চামড়া দান করা হয়েছে। এগুলো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মাগুরা গ্রামের ব্যবসায়ী এস এম রুবেল জানান, আমি লাখ খানেক টাকা মুল্যের একটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি করেছিলাম। ন্যায্য মুল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারবনা বিধায় পাশেই একটি কওমী মাদ্রাসায় দান করেছিলাম।
দক্ষিণ কাটিয়ার মাদরাসাতুস সাহাবাহ নামক কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ জামিল বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় এলাকার লোকেরা ২শ’১৩টি গরু ও ২শ’২০ টি ছাগলের চামড়া দান করেছিলেন। গরুর চামড়াগুলো গড়পড়তায় ৪শ’৭৫ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হয়েছিল। সাতক্ষীরার ক্রেতারা নিয়েছিলেন। আর ছাগলের চামড়া ক্রেতারা কিনতে চাচ্ছিলেননা। সবশেষ প্রতি পিচ মাত্র দশ টাকা দরে ছাগলের চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
তবে সিটি কলেজ এলাকায় অবস্থিত কওমী মাদ্রাসায় পাঁচ শতাধিক গরুর চামড়া পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণ করতে যা খরচ হচ্ছে, তাতে বিক্রি না হলে মারাত্মক ক্ষতিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
মাদ্রাসার শিক্ষক মাও. হাবিবুর রহমান জানান, বড় একটি অর্থের উৎস দানের চামড়া। এবছর ৫ শতাধিক চামড়া মাদ্রাসায় এসেছে। লবন দিয়ে প্রতিদিন প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ চলছে। তবে ক্রেতারা যোগাযোগ না করায় দু:শ্চিন্তায় রয়েছি।
পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হাশেম বলেন, আমি ২০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করি। গতবার কিছু চামড়া কিনেছিলাম। হাতে-পায়ে ধরে যশোরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু টাকা পাইনি। এবার তাই লোকসানের ভয়ে চামড়া কিনিনি।
বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জামালউদ্দীন বলেন, আমি এবার দেড় হাজারের মত চামড়া কিনেছি। কিন্তু ঈদের ৫দিন পার হলেও একটি চামড়া বেচতে পারিনি। ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করিনি।
তিনি আরও বলেন, গড় পড়তায় এক একটি চামড়া ৫শ’ টাকায় কিনেছি। মাস ব্যাপী লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে ২শতাধিক টাকা খরচ হবে। এরপরেও বিক্রি করতে পারব কিনা জানিনা। সাতক্ষীরার চামড়ার ক্রেতা মুলত যশোর ও ঢাকার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকেরা। গতবার তারা চামড়া নিয়েছে,তবে বিপুল পরিমাণ টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। লবন মেশানোর পরেও ১মাস পরে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। একদিকে চামড়া বিক্রি করতে না পারার শঙ্কা,অন্যদিকে বিক্রিত চামড়ার টাকা প্রাপ্তির অভরসা, সবমিলিয়ে খুবই দু:শ্চিন্তায় আছি। দীর্ঘদিনের পেশা বলে চামড়া ব্যবসা ছাড়তেও পারছিনা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় এবছর ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে ১৭ হাজার বিভিন্ন সাইজের গরু। বাকীটা ছাগল। মাইকিং করে জনগণকে চামড়ার দাম জানানো হয়েছে প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে। গরুর চামড়ার সরকারি রেট ৫৫ টাকা বর্গফুট। আর ছাগলের চামড়া ২২ টাকা বর্গফুট। তবে বর্গফুট হিসেবে না কিনে মোট হিসেবে কিনেছেন ক্রেতারা বলে শুনেছি।
এদিকে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে চামড়া পাচারের বিষয়ে কড়া নজরদারি রেখেছে বিজিবি। ভারতে চামড়ার দাম ভাল পাওয়া যায় বলে সেখানে পাঠাতে আগ্রহী সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ জানান, কোরবানির ঈদে ভারতে চামড়া পাচারের একটা সম্ভাবনা থাকে। সেই কারণে সীমান্ত জুড়ে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। কোনভাবেই ভারতে চামড়া পাচার করতে দেওয়া হবেনা বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিজিবির এই অধিনায়ক।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *