সরকারের ‘বিদায় ঘণ্টা’ শুনছেন মির্জা ফখরুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় সমাগত বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটার (সরকার) ঘণ্টা বেজেছে। সেদিন আমাদের খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেব বলেছেন, ইডেনে উনি (শেখ হাসিনা) ঘন্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করেছেন ক্রিকেট খেলা, তাদেরও(সরকার) ঘণ্টা বাজছে আর কী। ঘণ্টার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে চারদিকে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি দাবি করেন, নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই সরকারের পতন ডেকে আনছে। সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত হোন। এই যে কৃষি সম্পর্কে কথা বলেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে যেসব কথা বলেন, এসব বন্ধ করেন। আজকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, লবণের দাম বাড়ছে, নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কৃষি পণ্যের দাম বাড়লে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের তা না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন ফখরুল।
আমি গত পরশু এসছি ঠাকুরগাঁও থেকে। এখন ধানের মন সাড়ে পাঁচশ টাকা। যেটা তার (কৃষক) সাড়ে ছয়শ/সাড়ে সাতশ টাকা খরচ লাগে, তা পাচ্ছে না। কী যে কষ্টের মধ্যে কৃষকরা চলছে, যা আনবিলিভেবল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান তিনি।
এই যে দানবের মতো একটা সরকার সব তছনছ করে দিচ্ছে আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে, এই সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে।
বিএনপি নিজেরাই ভেঙে যাবে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির জন্মের পর থেকে ভাঙতে বহুবার চেষ্টা করেছে অনেকেই। এরশাদ সাহেবও চেষ্টা করেছেন বিএনপিকে ভাঙতে, সফল হননি। অনেকে চেষ্টা করেছেন। এরা(আওয়ামী লীগ সরকার) তো ১০ বছর ধরে চেষ্টা করেছেন বিএনপিকে ভেঙে ফেলার। এখন পর্যন্ত একটা লোককেও সরাতে পারেনি। পেরেছে? পারবে না।
কৃষির উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদান, খালেদা জিয়ার শাসনামলে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবনাগুলো তুলে ধরেন কৃষক দলের সাবেক সভাপতি ফখরুল। কৃষিবিদ জাবেদ ইকবালের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ১০ নভেম্বর মারা যান তিনি।
জাবেদ ইকবালের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সে একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিল। অবিশ্বাস্য রকমের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল তার। সে আইডল ছিল। কিভাবে লড়াই করতে হয়, কিভাবে কাজ আদায় করতে হয় … সব কিছু করেছে অবলীলায়। আমরা বড় একজন কৃতি মানুষকে হারিয়েছি। জাবেদ ইকবালের উপর স্মারক গ্রস্থ প্রকাশ ও পদক প্রবর্তনের পরামর্শ দেন আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হলি আর্টিজেনের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য আমরা সচেতন থাকব। জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে ভিন্ন একটি কারণও দেখান বিএনপি মহাসচিব।
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এসব ঘটনা ঘটার তখনই সুযোগ সৃষ্টি হয়, যখন মানুষ কথা বলতে পারে না, যখন মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হারায়, যখন মানুষ তার যে ব্যথা-বেদনা-ক্ষোভ-আক্ষেপ প্রকাশ করতে না পারে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার ১০/১২ ধরে এখানে এই অবস্থা তৈরি করেছে। এরা রাষ্ট্রটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে, সেটাকে এখন আমরা কোনো মতেই সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে পারি না। এটাকে পুরোপুরিভাবে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবার সকল চক্রান্ত প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
এগ্রিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) সদ্য প্রয়াত সভাপতি কৃষিবিদ জাবেদ ইকবালের স্মরণে এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক রাশীদুল হাসান হারুন, সদস্য সচিব জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রয়াত জাবেদ ইকবালের বোন ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, কৃষিবিদ ইব্ররাহিম খলিল, অধ্যাপক আবদুল হান্নান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।