April 27, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সরকারের এই মেয়াদেই ফাইভ-জি : জয়

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদেই দেশে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ফেয়ার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

জয় বলেন, আমরা বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো ফাইভ-জি শুরু করতে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের এই সরকারের শেষ সময়ে আমরা ফাইভ-জি চালু করব। আমরা আমাদের গত আমলে ফোর-জি শুরু করেছিলাম, তার আগে থ্রি-জি। ফাইভ-জি চালু করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

প্রযুক্তি বিশ্বে এখন ফাইভ-জি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন ধরে নিয়েছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ফাইভ-জিতে উন্নীত হব। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। আমরাও ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করব।

‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের’ কথা মাথায় রেখে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ‘জ্ঞানভিত্তিক’ পণ্য ও সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে আমরা দেখছি, তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে আমরা প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করছি। তবে অধিকাংশ তথ্যপ্রযুক্তি সেবা-ই যেহেতু ইন্টারনেটভিত্তিক, তাই রপ্তানির মাত্রা বের করা অসম্ভব। তবে আমরা আশা করব, আনঅফিসিয়ালি আরও এক বিলিয়ন বা আরও দুই বিলিয়ন ডলারও রপ্তানি হয়েছে।

দেশে থ্রি-জি ও ফোর-জি অ্যানাবল স্মার্টফোন না থাকার কারণে ডেটা ব্যবহারের সমস্যা থাকার কথা তুলে ধরেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলাম। ভাবতে শুরু করলাম কীভাবে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা এই বিষয়টাকে চাপিয়ে দিতে পারতাম না।

আমরা ঠিক করলাম, আমরা দেশেই মোবাইল উৎপাদন করে তা কম দামে মানুষের মাঝে দেব, যাতে বাংলাদেশের সব মানুষ মোবাইল ফোন কিনতে পারে। এক সময় আমরা ৩০ মিলিয়ন মোবাইল প্রতি বছর আমদানি করতাম, সেখানে আজকে ২০ মিলিয়ন মোবাইল ফোন বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে।

মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এখন বাংলাদেশে তাদের মোবাইল ফোন সংযোজন করছে। স্যামসাংয়ের সে মোবাইল ফোনগুলো ফিলিপিন্সে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের চেয়ে ‘ঢের ভালো’ বলে মনে করেন জয়।

তিনি বলেন, ফোর-জি চালু করার জন্য আমাদের সে মানের স্মার্টফোন দরকার ছিল। তবে বিদেশে থেকে আনা স্মার্টফোনগুলো ছিল বেশ দামি। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে গিয়ে স্মার্টফোন উৎপাদনের সব বাধা দূর করেছি। আজকে শুধু বাংলাদেশিদের চাহিদা পূরণের জন্যই আমরা স্মার্টফোন উৎপাদন করছি না। আমরা দেশের বাইরেও স্মার্টফোন রপ্তানি করছি, এমনকি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ আমেরিকাতেও।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ’২০ বছর ধরে ফ্রি স্পেকট্রাম’ সেবা দেওয়ায় দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে বলে জানান তিনি।

জয় বলেন, ডেটা কানেক্টিভিটির দিক থেকেও আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। ১১ বছর আগে এ দেশে ইন্টারনেটের দাম বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই কারণে আমাদের তেমন কোনো প্রযুক্তি খাত ছিল না বলার মতো। আমাদের আওয়ামী লীগ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। ১১ বছর আগে আমাদের এখানে টু জি কানেক্টিভিটি পাওয়াই যেত না, অধিকাংশ পেতাম ওয়ান জি। আমরা বিশ্বের অন্য সব দেশ থেকে বেশ পিছিয়ে ছিলাম।

আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রাইভেট সেক্টরগুলোর সঙ্গে বসলাম। নানা ইনসেনটিভ দিয়ে থ্রি জি স্পেকট্রাম অকশন দিলাম। তারপর পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা ফোর-জিতে উন্নীত হলাম। তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর ‘ইনফো সরকার-থ্রি’ প্রকল্পের আওতায় এখন দেশের সবগুলো ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছে দিতে কাজ করছে।

জয় জানান, দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে এখন ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছে গেছে। ইন্টারনেট সংযোগ ছিল জটিল একটি ইস্যু। প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা, আমরা ফাইবার অপটিক কেবল সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করলাম। এখন আমাদের লক্ষ্য, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সবগুলো গ্রামে অপটিকাল ফাইবার কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেওয়া।

পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তিসহ (ফাইভ-জি) দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা আয়োজন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। উদ্বোধনী পর্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকার জন্য ১৪টি শাখায় সম্মাননা দেওয়া হয়। মেলার তিন দিনে বিভিন্ন বিষয়ে ১৩টি আলোচনা সভা হবে, যেখানে সরকারের মন্ত্রী ও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন।

‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার প্রযুক্তির মহাসড়ক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, ডাক মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর উর রহমান, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও ঝাং ঝেং জুন উপস্থিত ছিলেন।

মেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাসড়ক বিনির্মাণে অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন সভ্যতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবটিক্স, বিগ ডেটা, বøকচেইন ও ফাইভ-জির বিস্ময়কর প্রভাব প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক কেবলে ফোন লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশন সংযোগ), মোবাইল অ্যাপ, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে এ মেলায়।

জেডটিই, হুয়াওয়ে, নকিয়া ও এরিকসন ফাইভ-জি প্রযুক্তির প্রদর্শন করবে মেলায়। ইন্টারনেট সেবাদাতাসহ (আইএসপি) ৮২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেবে।এতে ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *