July 27, 2024
জাতীয়

সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী অভিযানে প্রতি জনগণের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ : শেখ হাসিনা

বাসস

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয়কে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটের রায় উল্লেখ করে বলেছেন, এর মাধ্যমে সরকারের চলমান সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের প্রতি জনসমর্থন ব্যক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে যেই ওয়াদা দিয়েছি সেই ওয়াদা রক্ষা করাই হচ্ছে আমাদের কাজ। এবারের যে ভোট জনগণ দিয়েছে সেটা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান সেটাকে তারা সমর্থন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের মধ্যদিয়ে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, তারা জঙ্গিবাদ দেখতে চায় না। সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতি দেখতে চায় না। এর বিরুদ্ধেই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। কারণ তারা আস্থায় নিয়েছে আমাদেরকে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনা এবং অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার কারণেই তাঁর দল আওয়ামী লীগ জনগণকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের এই দশ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের জীবনে শান্তি বা শৃঙ্খলা এসেছে, জনগণের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়েছে এবং জনগণের মাঝে নিজের দেশকে বা নিজের পরিবারকে গড়ে তোলার যে সদিচ্ছা জাগ্রত হয়েছে সে কারণে তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কাজ করে দেশের মানুষকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন বলেই জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের পরাজয়ের জন্য নেতৃত্বের শূন্যতা, মনোনয়ন বাণিজ্য, যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে এক আসনে একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান এবং ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস এবং ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের কঠোর সমালোচনা করেন।
’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী কালের সামরিক শাসনামলে দেশের জনগণকে শোষণ করে একটি তথাকথিত এলিট শ্রেণী গড়ে তোলার জন্যও পরবর্তী শাসক শ্রেণীর সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশকে উন্নত করতে তাঁর সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ভেতরে সংঘাত, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি এগুলো বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।
ইতোমধ্যে গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে তাঁর সরকার জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে এবং দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের জাতীয় সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে উঠুক।’
তিনি অতীতে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন জাতীয় সংসদে তাদের কথা বলতে না দেয়া থেকে শুরু করে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার মাইক বার বার বন্ধ করে দেয়ায় বিএনপি-জামায়াতের তীব্র সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সশস্ত্রবাহিনী প্রয়োজন। আর এই সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই একে অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত করে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী গড়ে তোলেন এবং প্রতিরক্ষা নীতিমালা করে যান উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘সেই প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকেই আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ নির্ধারণ করে তার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আমাদের সেই সশস্ত্রবাহিনী এখন কেবল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। এর বাইরে যুদ্ধবিধ্বস্ত কুয়েত গড়ে তোলা এবং সেখানকার মাইন অপসারণে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করে যাচ্ছে।

পৃথিবীর বহু দেশের মত সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রসংগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন তাদের মাইন অপসারণের জন্য। কাজেই সেই মাইন অপসারণের জন্য আমরা তাদের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা স্মারকের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ, কারিগরি সহায়তা (মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং), নির্মাণ কাজে সহযোগিতা এবং সৌদি আরবের স্থল সীমানার মধ্যে থাকা অবিস্ফোরিত মাইন অপসারণে যেহেতু বাংলাদেশ এই কাজে যথেষ্ট পারদর্শী তাই আমরা সেখানে সহায়তা প্রদান করবো। ঠিক যেভাবে কুয়েতে আমাদের সেনাবাহিনী করে যাচ্ছে।
এছাড়া সামরিক প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং শিক্ষা বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ’৯৬ সালে সরকারে আসার পরই তাঁর উদ্যোগে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেখানে বিভিন্ন দেশের সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে সৌদি বাদশাহ এবং যুবরাজকে তার কথার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমি সৌদি বাদশাহকে ও ক্রাউন প্রিন্সকে বলেছি সে বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে যে, কোন দেশের সঙ্গেই অর্থাৎ তারা যদি কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাহলে সেই যুদ্ধে আমাদের দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যুক্ত হবে না। যুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করবো না।’
তিনি বলেন, ‘একমাত্র শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অধীনে যদি হয়, তখন আমরা যাব। আর আমাদের পবিত্র দুটি জায়গা মক্কা শরিফ এবং মদিনা শরিফ। এর যদি নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজন হয় সেখানে আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনী পাঠাবো। কাজেই এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী দেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গেই বৈরিতা নয়’, এর উল্লেখ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র সমস্যার সমাধান এবং আঞ্চলিক কানেকটিভিটি উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের কর্মসংস্থানের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে কেবল চাকরি নয়, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের সমালোচনার জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এদেশে মাটিগত ভিন্নতার কারণে এখানকার রাস্তা-ঘাট এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের অনেক দেশের থেকেই বেশি উল্লেখ করে তিনি জি এম কাদেরের অন্য এক আপত্তির জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী রাজধানীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে পর্যাপ্ত জলাশয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে রাজধানীর খালগুলো বন্ধ করে বক্স-কালভার্ট নির্মাণে এরশাদ সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, একটি দেশের প্রবৃদ্ধি যখন বেশি হয় এবং মূল্যস্ফীতি কম থাকে তখন সেই দেশের উন্নয়নের সুফলটা জনগণের ঘরে পৌঁছায়, এখন যেমনটি বাংলাদেশে ঘটে চলেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *