সংকটে ইরান-ইতালি, নিউ ইয়র্কে জরুরি অবস্থা
চীনের বাইরে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্যে ইরান ও ইতালিতে নতুন রোগী ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে। এদিকে এক রাতের মধ্যে নতুন ২১ জনের দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে, তাদের মধ্যে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
এদিকে ইরানে শনিবার নভেল করোনাভাইরাসে নতুন করে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে। এদিন এই ভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় একজন এমপিরও মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।ইরানে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজারে পৌঁছেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপৌর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৬ হাজারের বেশি মানুষের এখন পরীক্ষা চলছে। এদের বাইরে আরও এক হাজার ৬৬৯ জনের অসুস্থতার বিষয়টি ধরা পড়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা
চীনের মূল ভূখণ্ডে: ৮০,৬৯৫
চীনের বাইরে: ২৪,৫৮৮
মোট: ১,০৫,২৮৩
মৃত্যু
চীনের মূল ভূখণ্ডে: ৩,০৯৭
চীনের বাইরে: ৪৯৮
মোট: ৩,৫৯৫
চীনের বাইরে কোথায় কত মৃত্যু
ইতালি: ২৩৩, ইরান: ১৪৫, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৬, যুক্তরাষ্ট্র: ১৯, ফ্রান্স: ১৬, জাপান: ১৩, স্পেন: ১০, ইরাক: ৪
হংকং, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া: ২ জন করে,
তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, সুইজারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস: ১ জন করে
এদিকে ইউরোপে নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এই রোগে মৃতের সংখ্যা ২৩৩ জন ছাড়িয়েছে।আর শনিবার নতুন করে ১২০০ জনের এই ভাইরাস ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৮৩ জনে।
আক্রান্তদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা নিকোলা জিঙ্গারেত্তিও রয়েছেন। ক্ষমতাসীন জোট শরিক মধ্য-বামপন্থি দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জিঙ্গারেত্তি শনিবার এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, “আমি ভালো আছি। কিন্তু আগামী কয়েক দিন আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে।”
বিবিসি বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইতালি সরকার বেশ কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোমবারডিসহ আরও ১১টি প্রদেশে মানুষের যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে তারা।
এছাড়া এই রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অবসরে যাওয়া চিকিৎসকদের আবার কাজে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা।
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ফ্রান্স (৯৪৯), জার্মানি (৭৯৫), স্পেন (৪৪১), যুক্তরাজ্য (২০৬) ও নেদারল্যান্ডসে (১৮৮)।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের সান ফ্রান্সিসকো উপকূলে আটকে পড়া প্রমোদ তরীর ২১ যাত্রীর দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাত্রী ও নাবিক মিলিয়ে ৩ হাজার ৫৩৩ জন মানুষ এখন ওই প্রমোদতরীতে আটকা আছেন।এদিকে মিশরের নীল নদে থাকা প্রমোদতরীর ৩৩ আরোহীর করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই নৌযানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। মিশরের কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তরা সবাই মিশরীয় এবং তাদের দেহে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।
এদিন নতুন করে এই ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে মালদ্বীপ, মাল্টা, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, পেরু ও টোগোয়।চীনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশের শেনজং শি শহরে করোনাভাইরাস কোয়ারেন্টিন হিসেবে ব্যবহৃত একটি হোটেল ধসে প্রায় ৭০ জন আটকা পড়েছেন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই সময়ে লোকসমাগম এড়াতে রোববারের প্রার্থনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করার ঘোষণা দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস দেখা দেয়। এরইমধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বের শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।