শেখ হাসিনার সঙ্গে কাদেরই থাকছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হল, তাতে সভাপতি পদে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই পুনর্নির্বাচিত হলেন।
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার কাউন্সিল অধিবেশন শেষ পর্বে সর্বসম্মতিক্রমে তাদের নির্বাচিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ওপরই আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং পরের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করার ভার থাকছে।
তীব্র শীতের কারণে এদিন দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় কাউন্সিল অধিবেশনের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়। নতুন কমিটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা বিকালে হওয়ার কথা থাকলেও তা সেরে ফেলা হয় দুপুরেই।
রেওয়াজ অনুযায়ী দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করলে মঞ্চে আসে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে এ কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন- উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাইদুর রহমান।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু সভাপতি পদে আবারও শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। তাতে সমর্থন দেন সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য।
অন্য কোনো নামের প্রস্তাব না থাকায় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শেখ হাসিনাকে টানা নবমবারের মত সভাপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়, তিন যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এখনও কোনা ‘বিকল্প নেই’। ফলে সভাপতি পদে যে কোনো পরিবর্তন আসছে না তা আগেই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। আলোচনা ছিল মূলত সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।
নির্বাচন কমিশনের সামনে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান তাতে সমর্থন দেন।
এই পদের জন্যও অন্য কোনো নামের প্রস্তাব আসেনি। ফলে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাধারণ সম্পাদক পদে কাদেরকেই নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নতুন কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা এরপর সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদে সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে নাম প্রস্তাব করে কাউন্সিলের সম্মতি নেন।
সভাপতিমণ্ডলীতে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা নতুন তিনজনকে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন।
তাতে গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পান।
পুরনো সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মান্নান খান ও আবদুল মতিন খসরু।
উপদেষ্টা পরিষদে আগের কমিটির সদস্যদের নাম পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার যেহেতু উপদেষ্টার দশটি পদ বাড়ানো হযেছে, বাকিদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
পুরনো যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছেন সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
কোষাধ্যক্ষ পদে এবার নতুন কারও নাম ঘোষণা করেননি শেখ হাসিনা। এন এইচ আশিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই এ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সাংগঠনি সম্পাদক হিসাবে আগের কমিটির আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজমের নাম।
আগের কমিটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ হয়েছেন নতুন কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবার পুরো সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।
যেসব পদে নাম ঘোষণা হয়নি, পরে আলোচনা সাপেক্ষে সেসব পদ পূরণ করা হবে বলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।