রাজনীতি নয়, সরকারের ক্রটি ধরিয়ে দিচ্ছি: ফখরুল
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার দল ‘করোনাভাইরাস নিয়ে রাজনীতি’ করছে না, বরং সরকারের দোষক্রটি ধরিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, “করোনাভাইরাস একটা মহামারী। এর সঙ্গে তো রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতি নেই বলে আমরা সরকারের দোষক্রটিগুলো ধরিয়ে দিতে পারবো না? তারা বলবেন যে, রাজনীতি করবেন না। আমরা এখানে কোনো রাজনীতি করছি না।”
আন্দোলন-নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন করোনাভাইরাস নিয়ে ‘নিকৃষ্ট রাজনীতি’ করছে বলে বুধবার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের এক সভার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে আজকে যখন উদ্বেগ-আতঙ্ক, সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে নোংরা রাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তাদেরকে সহযোগিতার জন্য বলছি।”
বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে পথচারী, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের হাতে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কাদেরের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকে আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ শুরু করেছি। এই লিফলেট বিতরণের একটি মাত্র উদ্দেশ্য, এই ধরনের মহামারী থেকে জাতিকে সচেতন করা এবং আক্রান্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো।”
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, “আমাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের যে সমস্ত কর্মসূচি ছিল, তার বেশির ভাগও স্থগিত করেছি। আজ থেকে সারাদেশে এই লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের সব শাখাকে বলে দিয়েছি তারা সজাগ থাকবে, সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং আক্রান্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে।”এ ভাইরাস প্রতিরোধে অন্য অনেক দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশে সেই সচেতনতা ‘সৃষ্টি করা হয়নি’ বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করলাম, প্রথম দিকে এটাকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। সরকারের ভাষ্যে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার পরে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
“আমাদের এয়ারপোর্টে যে স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা আছে এটা এতই অপর্যাপ্ত যে, চীনা রাষ্ট্রদূতকেও এটা বলতে হয়েছে যে, এখানে পর্যাপ্ত স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা নেই।… যে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে এয়ারমার্ক করা হয়েছে সেগুলোতে সব রকম সুযোগ-সুবিধা এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি।”
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “আমরা এটা(করোনাভাইরাস) নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। আমরা বলতে চাই যে তারা (সরকার) অনেক দেরি করে এই কাজগুলো শুরু করেছেন। এর কারণ রাজনৈতিক কারণে বিশেষ বর্ষ পালনের কারণে তারা এই দিকে কোনো নজর দিতে পারেননি।”
সরকার উন্নয়নের কথা বললেও দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত এখনও দুর্বল রয়ে গেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সাধারণ মানুষ কখনোই সেখানে সেবা পাচ্ছে না। আজকে দেখুন, ব্যাঙের ছাতার মত সমস্ত মেডিকেল কলেজ তৈরি হচ্ছে, টাকা দিয়ে শুধুমাত্র সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ঢুকানো হয় এবং একটা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সত্যিকার অর্থে তারা চিকিৎসক হয়ে বেরোতে পারছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন না।
“একইসঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে অব্যবস্থাপনা, একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এটা কখনোই কাম্য নয়, হতে পারে না।”
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আজকে আমি পত্রিকায় দেখলাম, আমেরিকায় সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে এবং মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেইটে। ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ সারা বিশ্বই আজকে এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।
“আমরা যেটা মনে করি যে দেশে গণতন্ত্র থাকলে, গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে এই সমস্যাগুলো তৈরি হত না। অন্তত প্রতিরোধ এবং কিউর করার জন্য যার যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা সরকার নিতে পারত।”
‘করেনা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন’ শিরোনামে এক পৃষ্ঠার যে লিফলেট মির্জা ফখরুল রাস্তার মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, তাতে ‘খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ কথাটাও লেখা দেখা যায়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি একটা জাতীয় দাবি, গণদাবি। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্ন নাই। মানবিক কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া- এটা একটা জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“আমরা আবারও বলছি, আমরা এ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী নেতা তিনি, আজীবন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্যে, তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে যার অবদান রয়েছে, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।”
লিফলেট বিতরনের সময়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল ইসলাম, সেলিম রেজা মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন।