April 25, 2024
শিক্ষা

ভুয়া তথ্য দিয়ে জার্নালে শাবিপ্রবি অধ্যাপকের গবেষণাপত্র প্রকাশ

মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জি এম রবিউল ইসলাম। এছাড়া একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হাসান ও রায়হান উদ্দিন এ গবেষণাপত্রে অথর হিসেবে রয়েছেন।

‘স্ট্রাকচারাল মডেলিং টু আন্ডাষ্ট্যন্ড দ্য রিলেশনশিপ অ্যামং ফুড সেফটি নলেজ, এটিটিউড, অ্যান্ড সেল্ফ-রিপোর্টেড এইচএসিসিপি প্র্যাকটিসেস ইন রেস্টুরেন্ট অ্যামপ্লয়েজ ইন বাংলাদেশ’  (Structural modeling to understand the relationship among food safety knowledge, attitude and self-reported HACCP practices in restaurant employees in Bangladesh) শিরোনামে ‘প্লোস গ্লোবাল পাবলিক হেল্থ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক জার্নাল গত ৬ মে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পায়।

গবেষণা শুরুর আগে নিয়মানুযায়ী অনুমতি না নেওয়া, ল্যাবরেটরির ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা, ডাটা সংগ্রহ এবং এর সংরক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

গবেষণায় এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মান ক্ষুণ্ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আন্তর্জাতিক মহলে এসব জানাজানি হলে তারা আমাদের উপর থেকে আস্থা হারাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও ক্ষুণ্ন হবে।

গবেষণা পরিচালনার জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ বোর্ড থেকে অনুমোদন নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণাপত্রটিতে। যার রেফারেন্স নং হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (এফইটি/এম/১৯/০১৪)। কেননা কোনো স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে রিভিউ বোর্ড কিংবা ইথিক্স বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু গবেষণাটি পরিচালনা ও প্রকাশের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ইথিক্স বোর্ড ছিল না বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৮তম একাডেমিক কাউন্সিল সভার সুপারিশে ও ২২৪ নং সিন্ডিকেট সভায় ‘সাস্ট রিসার্চ ইথিক্যাল বোর্ড’ (এসআরইবি) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর। অথচ ২০১৯ সালে গবেষণাটির কাজ শুরু করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাস্ট রিসার্চ ইথিক্যাল বোর্ডের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ইথিক্যাল বোর্ড ছিল না। গত বছরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনে এ বোর্ডটি গঠিত হয়েছে। এর আগে যদি ইথিক্স বোর্ডের নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো গবেষণা পরিচালনা করে থাকলে সে তথ্য আমার কাছে নেই।

তাছাড়া গবেষণাপত্রটিতে ‘তথ্য সংরক্ষণের স্টেটমেন্টে’ উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকাশিত এ গবেষণার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে এ গবেষণার এমন কোনো তথ্য সংরক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বা অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের রিসার্চ সেন্টারে এমন কোনো ডাটাবেজ নেই এবং এখানে আমরা কোনো ডাটা সংরক্ষণ করি না।’

একই স্টেটমেন্টে ডাটা স্টোর সম্পর্কে ‘ফুড সেফটি  অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি’র নামে একটি ল্যাবরেটরি কথাও বলা হয়েছে, যার ঠিকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন- ই এর দ্বিতীয় তলার ৩২২/বি নং কক্ষ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উক্ত ঠিকানায় কোনো ল্যাবরেটরি নেই বরং উল্লেখিত ঠিকানার কক্ষটি অধ্যাপক ড. জিএম রবিউল ইসলামের নিজের বসার ঘর।

গবেষণাপত্রটির করেসপন্ডিং অথর অধ্যাপক ড. জিএম রবিউল ইসলামের সাথে ফার্স্ট ও সেকেন্ড অথর হিসেবে একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যথাক্রমে মো. জাহিদ হাসান ও রায়হান উদ্দিনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য সংযোজনে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে অথর এবং কো-অথরের মাঝে। এ বিষয়ে মো. জাহিদ হাসান এ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব ডাটা সংগ্রহ ও অনুমতি নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছু জানি না। শুধু আমাকে এটি লিখে দিতে বলা হয়েছে, আমি লিখে দিয়েছি। এ বিষয়ে রবিউল স্যার এবং গবেষণাপত্রটির আরেক লেখক রায়হান উদ্দিন বলতে পারবেন।

তবে এ বিষয়ে সেকেন্ড অথর রায়হান উদ্দিনের সাথে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক ড. জি এম রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যারা গবেষণা করি তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভালো মানের গবেষণা করতে যে সুযোগ সুবিধা থাকার দরকার তা পর্যাপ্ত না। আমরা যখন এ গবেষণাটিতে কাজ করি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ইথিক্স বোর্ড ছিল না। ভালো মানের জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশে ইথিক্স বোর্ডেও এপ্রুভাল চাওয়া হয়। সাস্ট রিসার্চ সেন্টারে ফান্ডিংয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট করি, সে হিসেবে আমি ভেবেছি লিখে দিলেই হয়ে যাবে। আমি না বুঝেই এ তথ্য লিখে দিয়েছি।  ভালো মানের গবেষণা পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে গবেষণা প্রকাশে ডাটা স্টোর, ইথিক্স বোর্ড, প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা নিশ্চিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *