ব্যাংকগুলো ‘ডাকাতি’ করছে : বাণিজ্যমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ব্যাংকগুলোর ঋণ এবং আমানতের সুদের পার্থক্য ৫ শতাংশের বেশি হওয়াকে ‘ডাকাতি’ বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে আহŸান এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, যে টাকা তারা (ব্যাংক) সুদ দেয় জনগণকে এবং যে টাকা তারা সুদ নেয় এই ডিফারেন্সটা পৃথিবীর কোথাও ২ শতাংশ বা ৩ শতাংশের বেশি না। বাংলাদেশেই একমাত্র যেখানে ৫ শতাংশের ওপরে এই ডিফারেন্স। এটা রীতিমতো ডাকাতি।
ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদ হার নিয়ে ব্যবসায়ীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। তারা বলছে, এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বলেন।
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ব্যাংকগুলো তা মানছে না। মানুষের ডিপোজিটের এগেইনেস্টে কত টাকা তারা পে করছে, আর কত টাকা তারা নিচ্ছে, এটা একটা সিস্টেমে আনার দরকার। এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার নির্দেশনা দিচ্ছেন, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হোক।
সুদের হার কমলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাতে সাধারণ মানুষেই উপকৃত হবে, বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। আব্দুল গণি রোডে বিদ্যুৎ ভবনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ভোক্তা অধিকার শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক ওই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন টিপু মুনশি।
পণ্য কেনার আগে মানুষকে সচেতন করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমি যা কিনছি, সেই বিষয়ে আমার জানতে হবে, আমি যা কিনছি সেই পণ্যের দাম কত এবং তা মেনটেইন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসার দিকে যেমন লক্ষ্য রাখতে হবে, তেমনি ভোক্তাদের অধিকারও সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যবসার পরিবারেশ ভালো না থাকলে ভোক্তাদের কেনার সামর্থ্য থাকবে না। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল থাকতে হবে। আমার যদি একটি টাকাও না থাকে, তাহলে আমি কীভাবে কিনব? তাই আমাদের মানুষের আয় বাড়াতে হবে, যাতে তাদের কেনার সামর্থ্য বাড়ে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ব্যাংকে যারা টাকা জমা করে, তারা সুফল পাচ্ছে না। আবার ব্যাংকগুলো বেশি হারে ভোক্তাদের কাছ থেকে সুদ আদায় করে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
ভোক্তাদের স্বার্থে নতুন যেসব আইন প্রণয়ন হয়েছে, সেগুলো কার্যকরে যেসব প্রতিষ্ঠানকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছে, সেগুলো শক্তিশালী নয় বলে দাবি করেন সাবেক এই সচিব। ভোক্তাদের ‘পকেট কাটার’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহŸান জানান তিনি। জাতীয় বাজেটে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিতের আহŸানও তিনি জানান।
খাদ্যপণ্যে ভেজালের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে একটি বেগুনও পাওয়া যাবে না যে তাতে ফরমালিন বা কীটনাশক দেওয়া হয়নি। এই সমস্যা দূর করতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ী আছে, তারা এমন কাজ করছে, যা মানুষকে হত্যা করার মতো। এই জায়গাতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেইনও বক্তব্য দেন।