বেনাপোল কাস্টম অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও ডলার চুরি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বেনাপোল কাস্টস হাউজের নিরাপদ গোপনীয় লকার ভেঙে সোনা, ডলারসহ মূল্যবান পণ্য সামগ্রী চুরি গেছে। দুর্ধর্ষ চুরি উদঘাটনে পোর্ট থানাসহ র্যাব, ডিবি, সিআইডি (ক্রাইম সিন) ও পিবিআই ঘটনাস্থলে তদন্তকাজ শুরু করেছে।
গত শনিবার (৯ নভেম্বর) অফিস করার পর রোববার সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে কাস্টম পাড়ায়। কি পরিমাণ মালামাল খোয়া গেছে তা কাস্টমের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোল্ট ইনচার্জসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কাস্টম সূত্র জানায়, কাস্টম হাউজের পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোপনীয় একটি কক্ষে তালার পর লোহার লকার ভেঙে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, ডলার ও টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে গেছে চোর। সেই কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে সংঘবদ্ধ চোর চক্র সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সেখান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলে কাস্টম সূত্রটি দাবি করে। ওই লকারে কাস্টম, কাস্টম শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধারকৃত স্বর্ণ, ডলার বৈদেশিক মুদ্রা, কষ্টিপাথরসহ মূল্যবান দলিলাদি ছিল।
সোমবার সকালে ওই লকারের তালা ভাঙা দেখে চুরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন কাস্টম কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে কাস্টমের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা। তারপর ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। কি পরিমাণ সোনা টাকাসহ অন্যান্য মালামাল চোরেরা নিয়ে গেছে তারও কোনো হিসাব কেউ বলতে পারেনি। সর্বশেষ বিকেল ৫টা নাগাদ ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র্যাব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই লকার রুমে প্রবেশ করেন।
এ সময় হাত-পায়ের ছাপ নির্ণয় করার সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসবির এএসপি তৌহিদুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর সৈয়দ মামুন হোসেন, র্যাব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, এআরও জিএম আশরাফ, বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ওসি মামুন খান প্রমুখ। তারা যৌথভাবে তদন্ত করছে। তদন্তের পর জানা যাবে কি পরিমাণ মালামাল সেখান থেকে চোরেরা নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, কাস্টম হাউজে সিসি ক্যামেরায় সুরক্ষিত একটি সংরক্ষিত এলাকায় কীভাবে এ ধরনের দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কাস্টম হাউজে নিজস্ব সিপাহিসহ আনসার ব্যাটালিয়নের একটি ইউনিটও নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালন করে।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খান জানান, বেনাপোল কাস্টমের গুদামে বিকল্প চাবি ব্যবহার করে চুরির ঘটনা ঘটেছে। কি পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে তার গণনাকাজ চলছে। তবে সেখানে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ছিল বলে জেনেছি। এখানে পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ সিআইডি ও পিবিআই কর্মকর্তারা তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, কি পরিমাণ অর্থ সম্পদ খোয়া গেছে এটা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খতিয়ান এর হিসাব মিলিয়ে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো।
বেনাপোল কাস্টস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, কাস্টম এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কড়াকাড়ি, ভায়াগ্রা চক্রের অপতৎপরতা ও কাস্টমস কমিশনারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য একটি চক্র এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ভোল্ট ইনচার্জ সাহাবুল সরদারসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেজিস্টার মেলানো হচ্ছে। গণনা শেষ না হলে বলা যাচ্ছে না কি পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। এ ঘটনায় যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।