April 18, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে নারীদেরও লাগবে স্নাতক ডিগ্রি

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পুরুষদের পাশাপাশি এখন থেকে নারী প্রার্থীদেরও শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। এমন বিধান রেখে আগের বিধিমালা সংশোধন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ জারি করেছে। এতদিন এইচএসসি পাসের সনদ থাকা নারীরা প্রাথমিকের শিক্ষক হতে পারতেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন মঙ্গলবার বলেন, শিক্ষক নিয়োগে এখন নারী-পুরুষ সবার যোগ্যতাই স্নাতক করা হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা উন্নীত হওয়ায় তাদের বেতন গ্রেড উন্নীতকরণে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আগের মতোই সরাসরি এবং পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি। এতদিন সব প্রধান শিক্ষক ও পুরুষ সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে এই শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল।

আগে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য ২৫ থেকে ৩৫ বছর এবং সহকারী শিক্ষক পদের জন্য ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যেত। এখন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর।

বিধিামালায় বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদের ৬০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী, ২০ শতাংশ পোষ্য প্রার্থী এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পুরুষ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করা হবে। নির্ধারিত কোটার শিক্ষকদের মধ্যে প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে (মহিলা ৬০%, পোষ্য ২০% ও অবশিষ্ট পুরুষ ২০%) অবশ্যই ২০ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিজ্ঞান ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের দিয়ে ওই ২০ শতাংশ কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে তা পূরণ করা যাবে বলেও বিধিমালায় বলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে তা পূরণ করা যাবে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির বিবেচনায় আসবেন। আর সহকারী শিক্ষকদের শতভাগ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে বেতন পান। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের পদ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে সরকার। তখন থেকে প্রধান শিক্ষকের ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে।

পদমর্যাদা উন্নীত হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও শিক্ষকদের বেতন বৈষ্যম্য দূরীভূতকরণের কথা বলা হয়েছে, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অর্থ বিভাগের সাথে আলোচনা করছি, সচিব পর্যায়ে আলোচনার পর বিষয়টি সমাধান না হলে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নিয়ে যাব।

সচিব বলেন, আগে এইচএসসি পাস যোগ্যতা (নারী সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা) চাওয়া হত, তখন স্কেল ছিল একটা, এখন যেহেতু নূন্যতম যোগ্যতা স্নাতক সুতরাং অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে স্নাতকের যে স্কেল আছে তার থেকে কম হওয়া উচিত না, আমরা সেভাবেই অর্থ বিভাগের সাথে প্রাথমিক আলোচনা করেছি এবং সেভাবেই প্রস্তাব তৈরি করছি। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সবশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা করেছিল সরকার।

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, কেউকে কোনো পদে এডহক ভিত্তিতে আগেই নিয়োগ দেওয়া হলে এবং ওই পদে তিনি অব্যাহতভাবে নিযুক্ত থাকলে তার জন্য প্রযোজ্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা শিথিল করা যাবে।

বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করলে বা বিয়ে করতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ হলে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

এছাড়া শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চূড়ান্ত নিয়োগের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং যথাযথ এজেন্সির তদন্তে চাকুরিতে নিযুক্তির অনুপযুক্ত নন এমন প্রত্যয়ন পেতে হবে।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *