প্রধানমন্ত্রীর নামে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৫
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় নেতাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ‘প্রতারণা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার’ চালানোর অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা জানান, র্যাব-২ এর একটি দল বুধবার রাতে ঢাকার মগবাজার, মোহাম্মদপুর এবং সাভার, ডেমরা ও কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- ওমর ফারুক (৩০), সাব্বির হোসেন (২৪), আল আমিন (২৭), আমিনুল ইসলাম আমিন (২৫) ও মনির হোসেন (২৯)। তারা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়, গুজব সৃষ্টি, উসকানিমূলক প্রচার চালিয়ে আসছিল বলে র্যাবের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, পেশায় ব্যবসায়ী ওমর ফারুক প্রধানমন্ত্রীর নামে ছয়টি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে একটি এবং আওয়ামী লীগ গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতীয় নেতাদের নামে ৩৬টি পেজ চালিয়ে আসছিলেন।
এসব পেইজে তিনি নিজের ব্যক্তিগত নম্বর দিয়ে রেখেছিলেন। কেউ ফোন করলে ফারুক তাদের বলতেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়োগ পেয়ে তারা এই পেজ পরিচালনা করছেন। সারাদেশে কে কী করছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো তার কাজ।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ইনবক্সে যোগাযোগকারী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা চাইতেন ফারুক। এ ভাবে কী পরিমাণ অর্থ তারা হাতিয়ে নিয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানোর কথা’ জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছেন ফারুক।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার সাব্বির হোসেনর নামে সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চারটিসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সাব্বির আগে তারেক জিয়া সাইবার ফোর্স, দেশনেত্রী সাইবার ফোরাম পেইজের অ্য্ডামিন ছিলেন। স¤প্রতি তিনি ‘শেখ হাসিনার পরামর্শ’ ও ‘সায়মা ওয়াজেদ পুতুল’ নাম দিয়ে দুটি পেজ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উসকানিমূলক ভিডিও পোস্ট করেন।
যে কোনো নতুন ইস্যুর আগমণ হলেই সাব্বিব তা সরকারবিরোধী অপপ্রচারে রূপান্তর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আল আমিন ‘সাইবার আপরাধের সাথে সম্পৃক্ত’ একটি পেইজের অ্যাডমিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় নেতাদের ছবি বিকৃত আকারে প্রকাশ করতেন। বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ভুয়া ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আসছিলেন। ফেসবুকে শেখ হাসিনার নামে বহু পেজ খোলা হয়েছে, যার কোনোটিই তার অফিসিয়াল পেজ নয়।
ফেসবুকে শেখ হাসিনার নামে বহু পেজ খোলা হয়েছে, যার কোনোটিই তার অফিসিয়াল পেজ নয়। আমিনুল ইসলাম আমিন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সহযোগী সংগঠন সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর একজন সদস্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি ফেসবুকে চারটি অ্যাকাউন্ট ও তিনটি পেজ চালানোর পাশাপাশি ইউটিউবে বিভিন্ন ‘কমিক আইটেম’ প্রচার করে আসছিলেন।
আওয়ামী লীগের লোগো সংযোজন করে একটি, প্রজন্ম চেতনা ও স্পাই উদ্দিন নামে দুটি ফিইসবুক পেজ থেকে গুজব সৃষ্টি ও উসকানিমূলক ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সত্যের বিস্ফোরণ’ নামের একটি ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন মনির হোসেন তিনটি অ্যাকাউন্ট চালিয়ে আসছিলেন।
তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে কেরানীগঞ্জ থানায় বেশ কটি মামলা রয়েছে। ফেসবুকে তিনি রাজনৈতিক অপপ্রচার, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা হোসেনের নামে ফেসবুক পেজ খুলে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে গত ১১ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে নেমে র্যাব অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।