April 26, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

পুনঃনির্বাচন চেয়ে ইসিতে ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
‘অনিয়ম-জালিয়াতির’ ভোট বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করে বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে এই স্মারকলিপি দেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু নির্বাচন কমিশনে যান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ইসির মিডিয়া সেন্টারে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। ফলাফল বাতিল করে আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছি। একেবারে তফসিলল ঘোষণা থেকে শুরু করে যে অনিয়মগুলো হয়েছে এবং জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা করা হয়েছে, সেটাও আমরা নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের ভেটিংকরণ ও হয়রানি, দলীয় মনোনয়নে বাধা প্রদান, মনোনয়নপত্র বাছাই এবং আপিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকা, ‘গায়েবি’ মামলা, গ্রেপ্তার হয়রানি ও নির্যাতন, প্রার্থীদের গ্রেপ্তার ও ‘অন্যায়ভাবে’ আটক, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিরুৎসাহিত করা বিশেষ করে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ‘আসতে না দেয়া’, প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান এবং সরকারের সাজানো প্রশাসন ও পুলিশের রদবদল না করে তাদের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়টিও উলে­খ করা হয়েছে। নির্বাচনের নামে ‘নিষ্ঠুর প্রহসন’ করে জাতিকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দশ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও বঞ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।
ভোটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে আইন শৃক্সখলা বাহিনী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সহায়তায় আওয়ামী কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের আশপাশের মোড়ে সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী মহড়া দেয় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়।
আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া, পোলিং এজেন্টদের মারধর, হয়রানি, গ্রেপ্তার, ভোটের আগের রাতে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভোট কাটতে বাধ্য করা, সারা দেশে জালভোটের মহোৎসব চললেও দেশের কোথাও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ভোট সংশি­ষ্ট মাঠপর্যায়ের কোন স্তরেই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। নির্বাচনে জয়ী বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা শপথ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি, শপথ নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ হয়ে যাওয়ার পর এখন পুনঃনির্বাচনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে, তাই আমরা তাদের কাছেই স্মারকলিপি দিয়ে গেলাম। সিইসি শুধু স্মারকিলিপি গ্রহণ করেছেন, কিছু বলেননি বলে জানান ফখর“ল। তাদের কিছু বলার তো নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থীরা যে সাতটি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলোতে অনিয়ম হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলোতেও হয়েছে, তবে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের ছবি তুলতে নিষেধ, মারধর করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, মোবাইলের ইন্টারনেট ফোরজি থেকে টুজিতে আনা হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *