October 4, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশনে চারদিনে অসুস্থ ‘অর্ধশতাধিক’

দ: প্রতিবেদক

১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বুধবারও বিক্ষোভ ও প্রতিকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ২য় পর্যায়ে গতকাল ৪র্থ দিনে অব্যাহত রয়েছে। খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আরও ১৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে। এনিয়ে গত ৪ দিনে অনশন কর্মসূচিতে মোট অর্ধশতাধিক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনশনস্থলে শতাধিকক স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে একত্বতা ঘোষণা করে অনশনে যোগ দিয়েছেন পাটকল শ্রমিকলীগের নেতারা। অন্যদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন নিরসনে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মঙ্গলবার রাতে খালিশপুরে জরুরী বৈঠক করেছেন দলীয় নেতাকর্মীর।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী- বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহালসহ ১১ দফা দাবিতে গতকাল বুধবার ভোর থেকে শ্রমিকরা আবারও শুরু করে বিক্ষোভ। ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, ষ্টার  মিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি রোডে, আলীম, ইষ্টার্ন, মিলের শ্রমিকরা আলীম মিল এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং, জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটের সামনে জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করেন। নামাজের পরপর খালিশপুর বিআইডিসি রোড, আটরা শিল্প এলাকার আলীম জুট মিল গেট ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় প্রতিদিনের মত শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হয়। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কনকনে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নীচেয়  রাত যাপন করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই অনাহারী শ্রমিকরা অসুস্থ’র সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৪র্থ দিনের এই অনশন চলাকালে ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের বিক্ষোভে গোটা শিল্পা এলাকার সাধারণ মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়। কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে চলতে থাকে সমাবেশ।

খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার পৃথক পৃথক  সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আব্দুল হামিদ সরাদর, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহীম, সাইফুল ইসলাম লিঠু,  মোঃ আলাউদ্দীন, মোঃ হারুন আর রশিদ মল্লিক, নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার, মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, ষ্টার জুট মিলের বেল্লাল মল্লিক, আব্দুল মান্নান. মাসুম গাজী, আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন, মোঃ আকতারুজ্জামান, হেমায়েত হোসেনসহ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ, পাটকল শ্রমিকলীগ সহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের নেতারা।

এদিকে শ্রকিমদের এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকের উদ্যাগ নিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তবে বৈঠকের প্রস্তাবে রাজি হননি শ্রমিক নেতারা। অন্যদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন নিরসণে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মঙ্গলবার রাতে খালিশপুরে জরুরী বৈঠক করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে শ্রমিকদের ১১ দফার দাবির বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্লাাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাহানা শারমিন বলেন, তীব্র শীতের মধ্যেও শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করছে। আমাদের দেয়া পিঠ ঠেকে গেছে। আন্দোলন করা ছাড়া আর কেনা উপাায় ছিলো না। এ অনশনে ঠান্ডাজনিত কারনে পাটকলের প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে। এছাড়া অনশনস্থলে প্রায় শতাধিক শ্রমিককে সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। এরপরও শ্রমিকরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসক বৈঠকের জন্য আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা সেই বৈঠক প্রত্যাখান করেছি। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি, জেলা প্রশাসক, শ্রম অধিদপ্তর দফায় দফায় শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেছেন। শুধুই প্রতিশ্রæতি আর আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকি লিখিত চুক্তি করেও তা বাস্তবায়ন করেনি। আমাদের শ্রমিকদের সাথে সবাই প্রতারনা করেছেন। ১১ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা রাজপথ ছাড়বেনা বলেও জানান এই সংগ্রাম পরিষদের নেতা।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *