পাইকগাছা-কয়রাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে অন্যত্র চলে যাচ্ছে
মোঃ আবুল হাশেম, পাইকগাছা
মিথ্যা মামলা, নদী ভাঙ্গন, ব্যাংকের চক্রবৃদ্ধির সুদ, আয় ব্যায়ের সামঞ্জস্যহীনতায় পাইকগাছা উপজেলায় ভুমিহীনদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকের লাল নোটিশ পেয়ে ভুমিহীনরা দিশেহারা। কেউ জমি বিক্রি করে ভিক্ষা করছে। কেউবা শহরে গিয়ে রিকসা টানছে। শিল্প ভিত্তিক তেমন কর্মসংস্থান না থাকার পাশাপাশি কৃষি ও চরাঞ্চল ভিত্তিক অর্থনীতিক কর্মকান্ডে তেমন একটা গতি আসেনি। নদী ও মৎস্য সম্পদ কেন্দ্রীক অর্থনীতি অনেকটা বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত খরা ও অনাবৃষ্টি সংকুচিত করতে আয়ের উৎস্যগুলোকে। মুলত এসব কারনেই খুলনা জেলার শীর্ষ দারিদ্র প্রবন উপজেলা হয়ে উঠেছে পাইকগাছা। এবিষয়ে পাইকগাছা মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এ্যাড. এফ,এম,এ, আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পাইকগাছা কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়ার কিছু অংশে মানুষ প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গনের শীকার হচ্ছে ফলে জমি হারা এসব মানুষ প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ছেন। আবার খুলনা জেলাটি কর্মহীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে শিল্পকারখানা ভিত্তিক কোন কর্মসংস্থান নেই। কাজেই অন্য জেলা গুলোতে গিয়েও বেশি ভাল করতে পারছে না স্থানীয়রা। আবার চর অঞ্চলে এখনো আধুনিক কৃষি সুবিধা পৌছানো সম্ভব হয়নি। ফলে মানুষ ঘুরে দাড়াতে পারছে না। উল্লেখিত উপজেলা সমূহ শতকরা ৬৫ জন ভুমিহীন এবং ৩ বেলা খেতে পারে না ৪০% পরিবার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. দিলীয় কুমার দত্ত জানান, ১৯৮৮ সালে ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকুলের প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড়। ১৯৯১সালের ২৯ এপ্রিল খুলনা চট্রগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণখালের সামুদ্রিক ঝড় ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সালে ২৫ মে আইলার ভয়াভহ ঘটা জলোচ্ছ¡াস। সুন্দরবন ঘেঁষা পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলা এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। জেজেএস খুলনা কোঅর্ডিনেটর জিয়া আহমেদ জানান, উল্লেখিত ৩টি উপজেলা সহ উপকুলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সহ নানা রকম চাষের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সিডর ও আইলার ভয়াভহ জলোচ্ছ¡াসে উক্ত এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। মাইলের পর মাইল সবুজের সমারোহ নেই। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙ্গন যোগ হয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। এর ফলে পাইকগাছা কয়রা দাকোপ উপজেলা এলাকার প্রতিদিন বেড়িবাঁধ ও নদী বিলীন হচ্ছে। উপর্যুপরি নদী ভাঙ্গনে কেড়ে নিচ্ছে কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তা ঘাট। দিন যতই যাচ্ছে। অত্র এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্থ হচেছ। সিডর ও আইলার ভয়াভহ ক্ষতিগ্রস্থ উক্ত ৩টি উপজেলায় কর্মসংস্থান প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। ফলে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভুমিহীনদের বিশাল জনগোষ্ঠী বেচে থাকে বেকারত্বের মধ্য দিয়ে।পাইকগাছা উপজেলায় কর্মসংস্থার প্রকল্প গড়ে উঠিনি। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচেছ। পাইকগাছা বাসস্ট্যান্ডস্থ জিরো পয়েন্টে আশাশুনির গদাইপুর গ্রামে ৪৪ বছরের ইমান মোড়ল সহ গোলাম কিবরিয়া ইসলাম ও মনিরুলের সঙ্গে কথা বললে জানান। আমাদের এলাকায় ধান না হওয়ায় আমরা কাজের সন্ধানে পেটের দায়ে বরিশাল যাচ্ছি। আমাদের জায়গা জমিও নাই, তাই অন্য জায়গায় কাজের সন্ধানে যাচ্ছি। কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার স্বর্তে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের এলাকায় লেগেইে আছে। পানি লবণাক্তার জন্য ফসল হয় না। দুমুঠো ভাতের জন্য জন্মস্থান ছেড়ে যাচ্ছি। কেউ যাচ্ছে ইটের ভাটায় কেউ যাচ্ছে বন আবাদ করতে। আবার অনেকেই শহরে রিক্সা কিংবা ইজি বাইক চালাতে।