October 8, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

পদ্মা সেতুতে বসল ১৯তম স্প্যান এ মাসেই ‘অর্ধেক দৃশ্যমান’

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

দুর্নীতির কথা তুলে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর দেশীয় অর্থায়নে নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হওয়া পদ্মসেতুর প্রায় অর্ধেক দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে এ মাসেই। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেতুটির জাজিরা প্রান্তের ২১ ও ২২ নম্বর পিলারের মাঝে ১৯তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে সেতুর দুই হাজার ৮৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুর ‘আরেকটি স্প্যান বসতে যাচ্ছে এ মাসের শেষে।’  এতে তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে। এ সেতুর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার নদীর মধ্যে ৪২টি পিলারের মাঝে বসানো ৪১টি স্প্যানের উপর হচ্ছে।

ছয় বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণে এগিয়ে যায়।

বুধবার স্প্যানটি বসানো বিবরণ দিয়ে গিয়ে পদ্মাসেতু সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, সকালে মাওয়ার মুন্সিগঞ্জের কুমার ভোগের বিশেষায়িত জেটি থেকে ১৯তম স্প্যানটি নিয়ে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেন ‘তিয়া নি হাউ’ জাজিরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

সকাল ১১টার দিকে স্প্যানটি নিয়ে জাজিরা প্রান্তে পৌছায়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে ২১ ও ২২ নম্বার পিলারের উপর স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মাসেতুর কাজ আর একধাপ এগিয়ে যায়। এ নিয়ে জাজিরা প্রান্তে ১২টি এবং মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সাতটি ১৫০ মিটার করে দীর্ঘ স্প্যান বসানো হয়েছে।

এ সেতুর প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উলে­খ করে সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ‘আগামী ২৮ ডিসেম্বর’ ২০তম স্প্যান বসানো হবে।

২০১৭ সালে প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। এরপর ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ১৩টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ‘সবকিছু ঠিক থাকলে’ চলতি বছর ১৪টি স্প্যান বসতে যাচ্ছে বলছেন কর্মকর্তারা।

প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, এ পর্যন্ত ৩৩টি স্প্যান মাওয়ায় পৌঁছেছে। পাঁচটি স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে এবং নয়টি পদ্মার চরে অস্থায়ী স্টক ইয়ার্ডে রাখা আছে। আরও চারটি স্প্যান চীন থেকে মাদার ভ্যাসেলে করে সমুদ্র পথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেতুর ৪২ খুঁটির মধ্যে ৩৫টি সম্পন্ন হয়েছে। গত বুধবার ছয় নম্বর খুঁটির কাজ শেষ হয়। ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ এ সপ্তাহে শেষ হবে। এছাড়া ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজও এগুচ্ছে।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। কংক্রিট ও স্টিলে তৈরি দ্বিতল এ সেতুর উপরিভাগ দিয়ে চলবে গাড়ি আর নিচ দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন।

পদ্মাসেতু দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতিসহ দেশের অর্থনৈতিতে নুতন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পদ্মাসেতুর দুইপাড়ে বড় শহর ও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এতে শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মঙ্গল মাঝির ঘাটের ইজারাদার মোকলেছুর মাদবর বলেন, আমরা জমিজমা দিয়েও শান্তি পেয়েছি। ধীরে ধীরে পদ্মাসেতু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আজ ১৯তম স্প্যান বসছে দেখে খুশি হলাম। আশা করি পদ্মাসেতু ২০২১ সালের মধ্যে যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সব স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *