April 19, 2024
আঞ্চলিক

নগরীতে বিরল রোগে আক্রান্ত নজরুলের জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে

চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা

দ: প্রতিবেদক

পরিবারের বড় সন্তান মো. নজরুল ইসলাম (৩০)। তার ছোট আরও ৫ ভাইবোন রয়েছে। তার ওপর বৃদ্ধ মা-বাবা। জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। দুরারোগ্য এক বিরলব্যাধি বাসা বেঁধেছে শরীরে। ডান পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফুলে প্রচন্ড ভারি হয়ে গেছে। দেখতে অনেকটাই হাতির পায়ের মত। যার প্রভাবে শরীরের ডান দিকের অংশে বুক, কান এবং মাথাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। ফলে কোন কাজকর্ম করা বা চলাফেরাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। নজরুল ইসলাম খুলনা মহানগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া বড় খালপাড় সংলগ্ন ৬০/১১, ওয়েস্ট সার্কুলার রোড এলাকার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। তার পিতার নাম রুস্তম আলী।

চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের নাম ‘ফেলারিয়াসিস’। তবে, পা ফুলে হাতির পায়ের মত দেখা যায় বলে রোগটি ‘ফাইলেরিয়া এলিফ্যান্ট’ নামেও পরিচিত। মশা বা এ জাতীয় বিষাক্ত কোন প্রাণির কামড়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। তার সুস্থ্যতার জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের চিকিৎসা ও প্রচুর অর্থ। কিন্তু তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে টগবগে যুবক নজরুল ধীরে ধীরে অক্ষম হয়ে পড়ছে। একদিকে নিজের অক্ষমতা, অন্যদিকে অসুস্থ্য মা-বাবার চিকিৎসা এবং ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়া ও সংসার পরিচালনায় কোন ধরণের সহযোগিতা করতে না পারার বেদনায় জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে তার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নজরুলের বয়স যখন ৭-৮ বছর, তখন কোন বিষাক্ত প্রাণির কামড়ে হঠাৎ করেই তার ডান পায়ের পাতা ফুলতে শুরু করে। সঙ্গে ব্যাথাও। প্রথমে স্বাভাবিক মনে করে ওষুধ সেবন করলেও নিরাময় হয়নি। নিরাময় হচ্ছে, হবে- এ আশায় কেটে যায় প্রায় দশ বছর। কিন্তু ততদিনে হাটু পর্যন্ত ফুলে যায়। পা ভারি হতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের প্রতিটি শিরায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, পানি ঝরা, ক্ষিচুনী এবং বমিসহ বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। যে কারণে লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেনির গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় রিকশার গ্যারেজে কাজ নেয় নজরুল। ভারি পা ও অসুস্থ্য শরীর নিয়ে প্রচন্ড মনোবলের সঙ্গে কখনও কখনও রিকশা চালিয়েও সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু এখন আর সেটি সম্ভব হয় না। এখন বাড়তে বাড়তে কোমর পর্যন্ত ফুলে গেছে। দেখতে অনেকটাই হাতির পায়ের মত। এছাড়া এ রোগের প্রভাবে তার বুকের ডান অংশে চাকাচাকা অনুভব হচ্ছে। ডান কানেও ঠিকমত শুনতে পাচ্ছে না। মাথায়ও প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। ভারি কাজ বা বোঝা বহন ও জোরে হাটা-চলা করলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে নজরুল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. রেজাউল মোমিনের তত্বাবধায়নে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। তবে, অর্থাভাবে প্যাথলজি পরীক্ষা এবং ওষুধ কেনা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

বিরলব্যাধিতে আক্রান্ত নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে তার অসহ্য যন্ত্রণা এবং দুর্বিসহ জীবনের অসহায়ত্বের কথা বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, একজন সুস্থ্য মানুষ হিসেবে অন্য দশজনের মত তারও অনেক স্বপ্ন, আশা ছিল। কিন্তু এ রোগের কারণে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবন্ধী’র চেয়েও অসহায় জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। তার এ অসহায়ত্ব দেখে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু মেলেনি কোন সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা। এখন তিনি তার চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’র সহায়তার আশায় অপেক্ষা করছেন। আবেদন জানিয়েছেন- সুস্থ্য জীবন ফিরে পেতে সামান্য সহানুভুতির।

নজরুলের বাবা রুস্তম আলী ও মা হনুফা বেগম তাদের বড় ছেলের এ দুরারোগ্য ব্যাধির বিষয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তমানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। (যোগাযোগ : ০১৮৬৫-৮৬৬২০৬, ০১৩০২-৫৬২৯৯৬।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *