ধর্ম অবমাননা: আসিয়া বিবিকে খালাসের রায় বহাল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবির বেকসুর খালাস পাওয়ার রায় বহাল রেখেছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। যে রায় পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছিল। আসিয়া বিবির মুক্তির রায়ের বিরুদ্ধে করা পিটিশনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত এ রায় ঘোষণা করেছে।
এ রায়ের ফলে প্রাণনাশের হুমকির মুখে থাকা আসিয়া বিবি এখন পাকিস্তান ছাড়তে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিবিসি’র এক সংবাদদাতা একথা জানিয়েছেন। আসিয়া বিবির দুই কন্যা এরই মধ্যে পাকিস্তান ছেড়েছে। এখন আসিয়া বিবিও বিদেশে আশ্রয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাকিস্তানের খ্রিস্টান নারী আসিয়া আট বছর মুলতানের কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে আছেন। গত অক্টোবরে মৃত্যুদণ্ডের রায় বদলে আসিয়াকে খালাস দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট, যা নিয়ে দেশটির কট্টরপন্থি মুসলিম দলগুলো তুমুল বিক্ষোভ করে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আসিয়াকে একটি বিমানে তোলার খবর জানালেও বিমানটির গন্তব্য কোথায়, তা বলতে পারেনি। পাকিস্তানের কট্টরপন্থি দলগুলো আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে বাধা দিতে সরকারের উপর চাপও সৃষ্টি করছে।
সহিংসতা ও বিক্ষোভ থামাতে আসিয়ার দেশত্যাগে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকার। নিরাপত্তার জন্য আসিয়াকে পাকিস্তানেরই একটি গোপন জায়গায় পাহারা দিয়ে রাখা হয়।
ওদিকে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আসিয়ার স্বামী আশিক মসিহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
মুক্তির পর আসিয়াও তাকে হত্যা করা হতে পারে আশঙ্কায় বিদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কানাডা আসিয়াকে আশ্রয় দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় বহাল রাখায় এখন আসিয়া পাকিস্তান ছেড়ে কানাডা যাওয়ার পথ প্রশস্ত হল।
২০১০ সালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুসলমানদের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে আসিয়া গ্রেপ্তার হন। তারপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। শুরু থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও নিম্ন আদালত তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়; হাইকোর্টও পরে একই সাজা বহাল রাখে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লংঘন বলেও অনেকে অভিহিত করেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রভাব বিদ্যমান। দেশটিতে ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি) আইনের পক্ষে শক্ত জনসমর্থন আছে। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদরাও প্রায়ই ধর্ম অবমাননা আইনে চরম শাস্তির পক্ষে সমর্থন দিয়ে থাকেন।