April 26, 2024
জাতীয়

দুদকের ‘সরল বিশ্বাসে’ জাহালমকাণ্ড

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
আসামি না হয়েও দুর্নীতির মামলায় পাটকলকর্মী জাহালমের তিন বছর কারাভোগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপাচ্ছে র্দ্নুীতি দমন কমিশন। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই তাদের তদন্ত কর্মকর্তারা প্রথম অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত আমলে না নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
গত ৩ ফেব্র“য়ারি জাহালমের জামিন আদেশের পর এ বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দিতে বলে আদালত। সে সময় দুদকের আইনজীবী ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য চার সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন, যাতে সাড়া দিয়েছিল আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য মঙ্গলবার হলফনামা আকারে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে দুদক। প্রতিবেদনটি বুধবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত পাঁচটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করারও আবেদন করেছে দুদক।
খুরশীদ আলম খান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে বুধবার আবেদন দুটির উপর শুনানি হতে পারে। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী বলেন, “ব্যাংকের মাধ্যমেই তথ্য-উপাত্ত পেয়ে আমরা অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। ব্যাংকের অফিসিয়ালরাই তাকে (জাহালমকে) আইডেন্টিফাই করেছে। আমরা সে কথাগুলো এফিডেবিট ইন ফ্যাক্টসে (ঘটনার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে) দাখিল করেছি। আশা করি, কাল শুনানি হবে।’
তিনি বলেন, “তার আগে ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে যে আবেদন, সেটি আগে শুনানি করতে চাচ্ছি। কারণ এখানে ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ পারসন। আমরা চাই ব্যাংকগুলো এসে তাদের কথা বলুক।”
এ ঘটনায় দুদকের দায় এড়াতে চাইছে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। আপনারা যেহেতু জিজ্ঞেস করছেন তাই বলছি, এ ঘটনায় দুদকের দায় কতটুকু কিংবা অমার দায় আদৌ আছে কি না সেটা আদালত নির্ণয় করবে।
“কারণ আমি পাবলিক ডকুমেন্টের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছি। সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩১ ধারায় বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি যদি সরল বিশ্বাসে কাজ করে থাকি তাহলে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এখানে আমার দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করবে আদালত। এই কারণে আদালতকে আমরা বলেছি, এই ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করে ব্যাংকসহ আমাদের কথা একইসাথে শোনেন।”
তাহলে কি জাহালমের ঘটনায় দুদক দায়মুক্তির পথ খুঁজছে-এমন প্রশ্নে দুদক আইনজীবী বলেন, “অবশ্যই না, অবশ্যই না। আদালত যে আদেশ দিয়েছে সে আদেশটা আমরা পালন করছি। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এফআইআর, অনুসন্ধান, চার্জশিট হয়েছে। দুদকের স্ব উদ্যোগে যদি এটা হত তাহলে এই প্রশ্নটার যুক্তি ছিল। যেহেতু ব্যাংক আমাকে ডকুমেন্ট দিয়েছে এবং ব্যাংকের দেওয়া ডকুমেন্টের উপর ভিত্তি করে আমি সব করেছি, এখন আদালত নির্ণয় করবে আমার দায় আছে কি না এবং থাকলে কতটুকু।”
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইন বা বিধি বা আদেশের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কাজের ফলে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে, তজ্জন্য কমিশন, কোন কমিশনার অথবা কমিশনের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে না৷’
আদালতে জমা দেওয়ার জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের রিপোর্টসহ যেসব রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগপত্র দায়ের করেছে, তার সবকিছু দেওয়া হয়েছে বলে জানান দুদক আইনজীবী।
“দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা জজ পদমর্যাদার একজনকে দিয়ে অনুসন্ধান করিয়েছে, তার কপিও দেওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার জন্য আবেদন করার কথা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মিস ম্যানেজমেন্ট হয়েছে। সোনালী ব্যাংকও বলেছে এই কথা।
“আশা করছি কাল শুনানি হবে। আদালতকে আমরা বলেছি কেন তাদের পক্ষভুক্ত করা প্রয়োজন। মোট ১৮টি ব্যাংক এখানে ইনভলবড। কিন্তু আমরা আপাতত পাঁচটিকে করেছি। এই পাঁচটাকে করলেই আমরা মনে করি সত্য ঘটনাটা বের হয়ে আসবে।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *