October 4, 2024
জাতীয়

জুয়ার সরঞ্জাম জব্দের আদেশ আপিল বিভাগে স্থগিত

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

দেশের ক্লাবগুলো থেকে ‘জুয়ার উপকরণ’ জব্দ এবং এসব খেলা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা স্থগিত করেছে সর্বোচ্চ আদালত। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা, উত্তরা ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবকে আপিলের অনুমতি দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।

আদালতে ক্লাবগুলোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমিরুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও মাসুদ রেজা সোবহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ রানজীব।

আইনজীবী রানজীব পরে বলেন, ঢাকা ক্লাবসহ পাঁচ জেলার অভিজাত ১৩ ক্লাবে জুয়া খেলা বেআইনি ঘোষণা করে হাই কোর্ট ১০ ফেব্রæয়ারি যে রায় দিয়েছিল, সেখানে মোট ৬টি নির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে ৩ নম্বর নির্দেশনাটি আপিল বিভাগ স্থগিত করেছে। এসব ক্লাবে জুয়া খেলার আয়োজনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সামিউল হক ও রোকন উদ্দিন মো. ফারুক।

এই ১৩টি ক্লাব হল- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১০ ফেব্রæয়ারি রায় দেয় হাই কোর্ট। টাকার বিনিময়ে ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল সব খেলা বেআইনি ঘোষণা করা হয় সেখানে। সেই সঙ্গে ছয়টি নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট।

১. সরকার অনুমোদিত লটারি ছাড়া নিপুণ, ১-৮, চরচারি, ডাইস, হউজি, থ্রি কার্ড, ফ্ল্যাশ, পোকারসহ যেসব খেলা শারীরিকভাবে, বিদুতের সাহায্যে বা অন্য কোনো যন্ত্র দিয়ে খেলা হয় এবং যা মূলত দক্ষতার উপর নয়, ভাগ্যের উপর নির্ভর করে,তা জুয়া।

এ জাতীয় খেলার অনুমোদন, আয়োজন, পরিচালনা আইনত অপরাধ। তবে এই খেলাগুলোই অর্থ, সম্পদ বা জীবন বাজি রাখা ছাড়া খেলতে বাধা নেই।

২. সরকারি অনুমোদন ছাড়া লটারি ড্র করার জন্য কোনো জায়গা বা অফিস ব্যবহার করলে দÐবিধির ২৯৪ ধারা অনুযায়ী তা অপরাধ।

৩. মহানগর ও মহানগরের বাইরে ঢাকা ক্লাবের মত অন্যান্য যেসব ক্লাবে এ ধরনের খেলা হয়, সেসব খেলার সরঞ্জাম দ্রæত জব্দ এবং নাগরিকদের এসব খেলা থেকে বিরত রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হল। ৪. শপিং মলে কূপনের বিনিময়ে পণ্য কেনা বা পিকনিকে র‌্যাফেল ড্র জুয়ার আওতায় পড়বে না।

৫. হাই কোর্ট আশা করে, সরকার আইন সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করবে। ব্যক্তির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় না নিয়ে আইনটি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করবে। তাছাড়া সরকার সরকার বিদ্যমান আইনের লঘু দÐ পরিবর্তন করে দÐ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে চিন্তা করবে, কারণ জনগণের আর্থিক ও অন্যান্য অবস্থান বিবেচনায় বর্তমান শাস্তি খুব সামান্য।

৬. রায় এবং রায়ের আদেশ বাস্তবায়নে পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, র‌্যাবের ডেপুটি কমিশনার দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই ঢাকা ও উত্তরা ক্লাব হাই কোর্টের রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে।

চেম্বার আদালত তাতে সাড়া না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। এর মধ্যে গত ২১ ফেব্রæয়ারি হাই কোর্টের রায়টি প্রকাশিত হলে বেশ কয়েকটি ক্লাব রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *