April 26, 2024
জাতীয়

চুরির অর্থের হদিস জানা আছে : গভর্নর

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ফিলিপিন্সের কোথায় কোথায় আছে, সে ব্যাপারে তথ্য থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যে মামলা হয়েছে, তাতে তিন বছর আগে রিজার্ভ চুরির আলোচিত ওই ঘটনায় জড়িত এবং সুবিধাভোগীদেরই আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউ অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলানায়তনে এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব ডলার ফিলিপিন্সের কোথায় আছে আমাদের জানা আছে। ফিলিপিন্সের বিভিন্ন জায়গায় আছে। সেগুলোতে তাদের সবাইকে রেসপন্ডেন্ট করে এ মামলা করা হয়েছে। যারা এটার সাথে জড়িত ছিল এবং যারা বেনিফিটেড হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। মোট ৬৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন (৬ কোটি ৬৫ লাখ) ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ে এ মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়ের করা মামলায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্র“য়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে।
এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক আমাদের সাথে এগ্রিমেন্ট করেছে মামলার প্রথম থেকে শুরু করে প্রতিটা ডলার উদ্ধার পর্যন্ত তারা আমাদের সাথেই থাকবে।
কতদিনের মধ্যে এ মামলার সুরাহা হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হতে পারে। তবে নিউ ইয়র্ক কোর্ট যেখানে এ মামলা করা হয়েছে, এখানে সাধারণত জলদি হয়। ফিলিপিন্সে অনেক বিলম্ব হত। ওখানে অনেক দীর্ঘসূত্রতা আছে। নিউ ইয়র্কে অনেক সুবিধা। আমরা আশা করছি খুব বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশের মামলাকে ভিত্তিহীন বলে আরসিবিসি কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের প্রসঙ্গে ফজলে কবির বলেন, আরসিবিসি এটা বললেও বুঝতে হবে যে আরসিবিসির ওখানে সমস্ত টাকা গিয়েছিল। অর্থাৎ ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসিতেই গিয়েছিল এবং সেটি চারটা ফেইক অ্যাকাউন্টেই গিয়েছিল, যে অ্যাকাউন্টগুলো বৈধ না।
এ কাজের জন্য আরসিবিসিকে ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রেকর্ড সর্বোচ্চ পানিশমেন্ট দিয়েছে। তাদেরকে সাজা দিয়েছিল এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) পেসো, অর্থাৎ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটা সঠিক ছিল না, এটা লন্ডার্ড মানি ছিল। এই কারণে তাদের শাস্তি দিয়েছিল। কাজেই আরসিবিসি এটা বললেই তো হয় না।
এর আগে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, সরকারের টার্গেট অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে নিয়ে যেতে হলে এ দেশকে রপ্তানিপ্রধান অর্থনীতির দেশ করতে হবে। এভাবে দেশের অর্থনীতিকে সাজানোর জন্য দেশের ব্যাংক খাতকে ভূমিকা নিতে হবে।
ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি) এর ১১তম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রহিম ও বিআইবিএম সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *