October 12, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

চীন থেকে দেশে আসা সবাই সুস্থ : আইইডিসিআর

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

গত ১৪ ফেব্রæয়ারি চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্প ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। গতকাল শনিবার তাদের ১৪ দিন পূর্ণ হবে। এখন পর্যন্ত ৩১২ জনই সুস্থ রয়েছেন। তাদের কারোর মধ্যে কভিড-১৯ এর কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই।

তারপরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, তাদের যখন সময় পূর্ণ হবে তখন আবার তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এটা সম্পন্ন করার পর তাদের পাসপোর্টসহ অন্য ডকুমেন্টের প্রক্রিয়া রয়েছে। যেহেতু তারা ফিরে যাবেন, তাই তাদের অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে যেতে পারেন সেগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। এখান থেকে চলে যাবার পর তাদের করণীয় কী হবে সে সর্ম্পকেও তাদের বলা হবে।

গতকাল রশনিবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব তথ্য জানান।

৩১২ জনের স্ক্রিনিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে কেউ যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের আগে একটি স্বাস্থ্য ফর্ম দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজেরাই কভিড-১৯ এর লক্ষণ-উপসর্গ আছে কিনা জানিয়ে সেটি পূরণ করবেন।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, চারটি ডেস্ক করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে স্ক্রিনিং শুরু হবে। চিকিৎসকরা তাদের দেখবেন। কোনো লক্ষণ না পাওয়া গেলে ফর্মে চিকিৎসকরা স্বাক্ষর করবেন। পরে চারটি ডেস্কে তাদের পাসপোর্টসহ অন্য ডকুমেন্টস রাখা হবে। সেখান থেকে তারা নেবেন।

তিনি বলেন, পরে আরো চারটি ডেস্কে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন এমন সার্টিফিকেট নেবেন। এরপর তাদের পুরো কার্যক্রম শেষ হবে। সবমিলিয়ে আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করার পর শেষ হতে রাত হয়ে যাবে। এরপর তারা ফ্রি। তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হজ ক্যাম্প ত্যাগ করবেন। তবে আমরা রোববার পর্যন্ত তাদের থাকার ব্যবস্থা ওখানে রেখেছি।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, সারা বিশ্বে মোট নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৩ জন। যারমধ্যে কেবল চীনেই রয়েছে ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন। যাদের নিশ্চিত রোগী বলা হচ্ছে এবং গত একদিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ৫৬ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮১ জন। যারমধ্যে ১২১ জন গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন বলে রিপোর্টে হয়েছে। চীনের বাইরে নিশ্চিত হওয়া ৫০৫ জন। যারমধ্যে ৫৮ জন নতুন রোগী। নতুন করে কোনো দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে জাপানে যিনি মারা গেছেন তার চীনে যাবার কোনো ইতিহাস নেই।

গত ২৪ ঘণ্টায় সিঙ্গাপুরে ৯ জন নতুন রোগী যোগ হয়েছে। তবে আমাদের জন্য আশস্ত হবার বিষয় যে, সেখানে বাংলাদেশি নতুন রোগী নেই। সিঙ্গাপুরে মোট কনফার্ম রোগী ৬৭ জন। সেখানে পরীক্ষা করার পর নেগেটিভ এসেছে ৭৫৪ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। বাংলাদেশের চারজন আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন একজন, বাকিরা আইসোলেশনে আছেন।’ আমাদের নজরদারির একটা বড় অংশ হটলাইনের মাধ্যমে হয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১২২টি কল এসেছে। এরমধ্যে কভিড-১৯ নিয়ে কল এসেছে ৯৩টি।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আর কোনো রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে কারো শরীরে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনসহ অন্যদের আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেখানে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে কভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেন পরিচালনা করা হয়।

তাদের সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, চীন থেকে এলেই যেন তাদের আইসোলেশনে রাখার বা আতঙ্কিত হবার পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন দু’টো ভিন্ন বিষয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যদি কাউকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ করা হয় অথবা করোনা সর্ম্পকিত লক্ষণ-উপসর্গ থাকে তাদেরই কেবলমাত্র আইসোলেশনে রাখা হবে। কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে যাদের করোনা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে বা করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে এসেছেন অথবা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাদের রাখা হয়।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, কেউ চীন থেকে এলেই রোগী নন। চীন থেকে এলেই তিনি করোনাতে এক্সপোজড নাও হতে পারেন। এখানে ভুল বোঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি হচ্ছে। চীন বা সিঙ্গাপুর থেকে এলেই যে তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন-এটা নিয়ে বিভ্রান্তি হচ্ছে। আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের ১৪ দিন বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। অত্যাবশ্যকীয় না হলে বাড়ির বাইরে না যাবার অনুরোধ করছি। আর বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।

তিনি বলেন, মাটিতে শুতে দিয়েছি তবে এটা অবশ্যই খুশি মনে দেইনি। কিন্তু আমাদের এটা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে ৩১২ জনকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করতে পারতাম। তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি সেদিকেই ফোকাস করতে চেয়েছি।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের কিছু হলে আলাদা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার প্রয়োজন হলে ফর্মাল কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি হলে তাদের যেন কোয়ারেন্টাইন করতে পারি। তবে আমাদের সেভাবে আলাদা করে কোয়ারেন্টাইন করার মতো সে রকম জায়গা নেই। থাকলে তাদের আমরা হজ ক্যাম্পে রাখতাম না। এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি যে, এতোজনকে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে। ৩১২ জনকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে এটা আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা।

আর এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জায়গাতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তারা উহান থেকে এসেছে এবং বেশ বড় গ্রæপ তাই তাদের এখানে একসঙ্গে রাখা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী। তবে আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটাই সঠিক ছিল। যে কার্যক্রম নিয়েছি সেটাই পরিচালনা করছি। সবসময় বলেছি, যদি রোগী শনাক্ত হয়, তাহলে যত দ্রæত সম্ভব তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা। যেন তার কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।

তিনি বলেন, ১৪ দিনের ইনকিউবিশন পিরিয়ড পার হবার পর যদি কারো মধ্যে কভিড-১৯ এর লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তার থেকেও কিন্তু ছড়াতে পারে। তাই আমরা অনুরোধ করছি, আমাদের দেওয়া তথ্যকার্ডে যখনই যারা বাইরে থেকে এসেছেন, তারা নিজেকে প্রথমেই অন্যদের থেকে আলাদা করবেন। মাস্ক ব্যবহার করা ও আইইডিসিআরকে অবহিত করবেন।

আমাদের প্রস্তুতি বা কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। সব পোর্টকে অ্যালার্ট করেছি। প্রথমদিকে চীনের ফ্লাইটকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হলেও পরে সেটা সব ফ্লাইটের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে এখনও কিন্তু বেশি জোরদার চীন ও সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট।

এখনও রোগী শনাক্ত হয়নি দেশে, তাতে করে আইইডিসিআর সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, বিশ্বে যতক্ষণ একজন রোগীও থাকবে ততক্ষণ সন্তুষ্টির জায়গা নেই। সতর্ক থাকতে চাই- ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাজ করছি। প্রস্তুতি কার্যকম চালাতে হবে।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *