গৃহস্থের গরুও নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ, অস্বীকার বিজিবির
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঠাকুরগাঁওয়ের যে এলাকায় একদিন আগে সংঘাত বেঁধেছিল, সেই গ্রামে এক মাস ধরে বিজিবি সদস্যরা গৃহস্থের গরুও নিয়ে যাচ্ছিল বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। তবে গ্রামবাসীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিজিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ভারত থেকে অবৈধ গরু চোরাচালান বন্ধেই অভিযান চালাচ্ছেন, নিরীহ কাউকে হয়রানি করছেন না।
গরু জব্দ করা নিয়ে মঙ্গলবার সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামে বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় একদলের সংঘর্ষ বাঁধে। তখন বিজিবি সদস্যদের গুলিতে তিনজন নিহত হন। তাদের দুজন কৃষক এবং একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। বকুয়া ইউনিয়নের বেতনায় বিজিবির একটি বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) রয়েছে। তাতে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
ঘটনার একদিন পর বুধবার বহরমপুর গ্রামে সাংবাদিকরা গেলে অনেকেই অভিযোগ করেন, বিজিবি সদস্যরা অবৈধ বলে গৃহস্থের গরুও নিয়ে যায়। টাকা দিয়ে সেই গরু ফেরত আনতে হয়, অনেক সময় টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না।
জয়গুন বেগম নামে এক নারী বলেন, বিজিবি সদস্যরা আমাদের দুটি হালের গরু ধরে নিয়ে গেছে। তারা গরুগুলো অবৈধ দাবি করে নিয়ে যায়। অনেক ঘুরেছি। তারপরও গরু ফেরত দেয়নি। এখন আমরা কেমন করে চাষ করব প্রশ্ন করেন এই নারী।
ওই গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও বেতনা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা নিরীহ কৃষকদের গরু ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাগজপত্র দেখালেও গরু ফেরত দেয় না। গত দেড় মাস ধরে ৩০ থেকে ৪০টি গরু বিজিবি সদস্যরা নিয়ে গেছে। এখন তাদের ভয়ে গরু পালনকারীরা আতঙ্কে রয়েছে।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা সলেমান আলী বলেন, গত এক মাস ধরে বিজিবি সদস্যরা প্রত্যেক বাড়িতে দিনে-রাতে হানা দিয়ে কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও গরু তুলে নিয়ে যায়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কাগজপত্র নিয়ে ক্যাম্পে গেলে টাকা নিয়ে কিছু গরু ফেরত দেয়; আবার কিছু গরু ফেরত দেয় না। বিজিবির দ্বারা মানুষ হয়রানি হচ্ছে। আমরা চাই বিজিবি যেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করে, বলেন এই গ্রামবাসী।
বকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, যারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসে বিজিবি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, উল্টো সাধারণ কৃষকদের উপর জুলুম শুরু করেছে। বিজিবির মনে কী আছে, জানি না। সরকার তাদের কী নির্দেশনা দিয়েছে, তাও জানি না, বলেন তিনি।
বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বাহিনীর ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ বলেন, বিজিবি সদস্যরা কখনই মানুষকে হয়রানি করে না। সীমান্ত দিয়ে যারা অবৈধভাবে গরু চোরাচালান করে, তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। আমাদের দ্বারা কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানি হয় না।
সংঘাতের পর মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন বলেছিলেন, গত এক মাসের কম সময়ে সীমান্তে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটার পর তারা কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। তাতে অনেক অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এজন্য চোরাকারবারি চক্রগুলো বিজিবির বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে ইন্ধন জোগাচ্ছে।
মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, বেতনা বিওপির একটি টহল দল বহরমপুর গ্রামে অভিযানে গিয়ে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে পাঁচটি ভারতীয় গরু জব্দ করে। এরপর গরুগুলোকে ট্রাকে তুলে আনার সময় আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় বিজিবি সদস্যরা।
হামলাকারী কারা- এই প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, নিহতরা অবশ্যই চোরাকারবারি দলের সঙ্গে জড়িত, নাহলে তারা কেন রাস্তার মাঝপথে পরিকল্পিতভাবে বিজিবির টহল দলের উপর আক্রমণ করল। এটি একটি বিরল ঘটনা। এখানে বিজিবির সদস্যদের হতাহত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারও না কারও ইন্ধনে কিংবা বিজিবির সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বহরমপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন, এই শত শত লোক চোরাকারবারি না। দু-চারজন চোরাকারবারিকে রক্ষার জন্য শত শত লোক বিজিবির রাইফেলের সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন যে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ কারণে মঙ্গলবার শত শত লোক বের হয়ে এসেছিল।
গরু নিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীকে হয়রানি করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।