April 26, 2024
আঞ্চলিক

কয়রায় জনগণের দাবী উপেক্ষা করে ঘেরে লোনা পানি উত্তোলন

কয়রা প্রতিনিধি

খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামে পাউবোর বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে অবৈধ ভাবে লবন পানি উত্তোলনের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। তারা অবৈধ পাইপ অপসারন করে লবন পানি মুক্ত পরিবেশে শান্তি পূর্ন ভাবে ধান চাষ করতে চায়। তবে প্রভাবশালী ঘের মালিকরা জনসাধারণের এ দাবী উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমঝোতা করে লবন পানি উত্তোল করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার কৃষকরা। এলাকাবাসীর দাবীর সত্যতা নিরপনে এবার মাঠে নেমেছেন খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী প্রকৌশলী পানিউন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় নিরুপায় জনসাধারণ এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১ ও ২ নং সিট তেঁতুলতলা গ্রামবাসীর পক্ষে আহাদুজ্জামান গাজী, বিজন কুমার সরদার, সুকুমার সরদার ও সুধীর সরদার  গত ১২ মে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর লিখিত অভিযোগে করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, স্থানীয় জমির মালিক ও জনসাধারণের দাবী উপেক্ষা করে বাবুরাবাদ গ্রামের জি এম রফিকুল ইসলাম, জি এম রেজাউল ইসলাম, তেঁতুলতলা গ্রামের ইসহাক গাজী, ইউসুফ গাজী, অজিয়ার রহমান, ছবেদ আলী, জলিল গাজী অবৈধ ভাবে পাউবোর রাস্তা কেটে প্লাষ্টিকের পাইপ বসিয়ে ঘেরে লবন পানি তুলে চিংড়ি চাষ অব্যহত রেখেছে। গ্রামবাসী অবৈধ পাইপ অপসারন করে লবন পানি মুক্ত পরিবেশে যাতে ধান চাষ করতে পারে এবং পরিবেশ রক্ষায় অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করে। এরপর নিরুপায় জনসাধারন দারস্ত হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্ট গত ১৯ মে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করে।

গত ৩ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাসান আলী সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তেঁতুলতলা এলাকাটি একেবারেই সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা একটি জনপদ। এই এলাকায় চিংড়ির চাষ পরিবেশবান্ধব কোনো কার্যক্রম নয়, এটি পরিবেশের শত্রæ। তাই চিংড়িঘের করতে হলে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করতে হবে। নিতে হবে পরিবেশ ছাড়পত্র।

এখানে বনভূমি ও পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো চিংড়িঘের করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অভিযোগের স্থানটির চারিপাশে পাউবোর বাঁধ ছিদ্র করে ৭টি স্থান দিয়ে পাইপ বসিয়ে অবৈধ ভাবে লবন পানি উত্তোল করছেন ঘের মালিকরা। যেটা সম্পুর্ণ ভাবে পরিবেশ বিরোধী কার্যক্রম। তিনি অতিদ্রæত সময়ের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযুক্ত ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। স্থানীয় ঘের মালিক শাহিনুর জানান, তিনিও এলাকার অধিকাংশ মানুষেরমত লবণ পানিতে মাছ চাষ বন্ধ করে উন্নতশীল ধান চাষ করে এলাকার খাদ্যর চাহিদা মিটাতে চান। কিন্তু পাশের ঘেরে লবন পানি উত্তোলন করার কারণে তারা জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না । একারনে তিনি বাধ্য হয়েই ঘের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মো. মোকতার হোসেন নামের তেঁতুলতলা এলাকার বাসিন্দা ডান হাতের তর্জনী তুলে পাশের মহেশ্বরীপুর গ্রামের দিকে ইশারা করে বলেন, ঐ গ্রামের বাসিন্দারা গত ৭ বছর আগে লবন পানির ঘের বন্ধ করে মিষ্টি পানির মাছ ও ধান চাষ করে লাভোবান হচ্ছে। আমরাও চাই লবন পানির ঘের বন্ধ হোক।

এদিকে চিংড়ি চাষের পক্ষে তেতুলতলা এলাকার অভিযুক্ত ঘের মালিক ইউসুফ গাজী বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর আমরা লবণ পানির চিংড়ি চাষ করে আসছি কোন সমস্য হয়নি।এছাড়া  প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে এলাকায় ধান বেশি উৎপাদন হয় না। তার অভিযোগের তীর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দিকে। তিনি বলেন, এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান  নিজেই অন্যের জমি ডিড নিয়ে ঘেরের ব্যবসা করতেন এখন স্থানীয়রা তাকে আর ঘের করতে  জমি দিতে চাচ্ছেনা বলে তিনি ঘেরের বিরোধিতা করছেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার বলেন, তেঁতুলতলার বিলে তার নিজের ২৫০বিঘার মত জমি রয়েছে। তিনি অন্যের জমি নানিয়েই ঘেরের ব্যবসা করতে সক্ষম বলে দাবি করেন। তারপরেও এলাকাবাসীর দাবীর কারণে নিজের লবন পানির ঘেরটিও বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খাঁন বলেন, আমরাও ভেড়িবাঁধে বোরিং ও নাইনটি পাইপ মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করছি, শীঘ্র তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন কর হবে।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *