April 25, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

ক্ষমতা ভোগের নয়, মানুষকে ভালো রাখাটাই বড়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্ষমতায় থেকে নিজে খাব, নিজে ভালো থাকব; এটা নয়। ক্ষমতা আমাদের কাছে ভোগের বিষয় নয়। কীভাবে মানুষকে ভালো রাখা যায়, সেটাই হলো বড়।’

তিনি বলেন, ‘একটি ঘর পেয়ে দুঃখী মানুষের মুখে যে হাসি, এটাই জীবনের বড় পাওয়া। মানুষের জন্য মানুষ, এটাই তো সব থেকে বড় কথা।’

প্রধানমন্ত্রী রোববার (২০ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তা, কুড়িগ্রামের সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও সুবিধাভোগীরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এছাড়া দেশের আরও ৪৫৯টি উপজেলা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬০৮ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে কক্সবাজারে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। আমাদের সচিবরাও তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন। পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা এ কাজে এগিয়ে এসেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি- বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করব। এ জন্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছি, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গৃহহীন মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীর জন্য ঢাকায় ভাড়ায় থাকার জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গ্রামপর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা এবং তৃণমূল মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করছি।’

আশ্রয়ণের জন্য তহবিল করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে জমি পাব না, এ তহবিল থেকে জমি কিনে দেব। ঘরে করে দেব। আমরা চাচ্ছি, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে। কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের বাড়ি করে দেব। আমি মনে করি- এতোটুকু করতে পারলে আবার বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আত্মাটা শান্তি পাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছি, গ্রাম-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে। কোথায় কী সমস্যা জানি। আওয়ামী লীগ অধিকার নিয়ে কাজ করে। জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

বক্তব্যের শেষ করার আগে একটি অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব শেষ হচ্ছে না। টিকা নিয়ে আসছি, আরও আনব। এরমধ্যে কিন্তু সবার স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে চলা; হাতধোয়া, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা দরকার। নিজে ভালো থাকবেন, অন্যকে ভালো থাকতে সহযোগিতা করবেন।’

এরপর সারাদেশে ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেয়া হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে আমি যেহেতু যেতে পারিনি। আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি এবং ইউএনও জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন।’

দলিল ও চাবি তুলে দেয়ার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।

প্রসঙ্গত, আশ্রয়ণের দেয়া জমির দলিলে মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে। সেমিপাকা এসব বাড়িতে আছে দু’টি রুম, একটি বড় বরান্দা, রান্না ঘর ও টয়লেট।

পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে। এছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে ওইসব পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও রয়েছে।

মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তারই অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ি ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ গৃহ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয়মাসে মোট এক লক্ষ ২৩ হাজার ২৪৪ পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া গেল বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন।

তারও আগে জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে বহুতল ভবনে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এভাবে দেশের সব মানুষের জন্য স্থায়ী আবাসনের বন্দোবস্ত করবে সরকার।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *