July 27, 2024
জাতীয়

ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

যুবলীগ চেয়ারম্যানের বক্তব্য দৃশ্যত নাকচ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই ক্যাসিনো বন্ধের অভিযান চালানো হয়েছে।

ক্যাসিনোগুলো এতদিন চলে আসার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততার যে ইঙ্গিত যুবলীগ চেয়ারম্যান করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশে আইনে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও বুধবার র‌্যাবের অভিযানে ঢাকার চারটি ক্লাবে জুয়ার আখড়ার সন্ধান মেলে, যেগুলো ক্যাসিনো নামেই পরিচিত। ওই ক্যাসিনোগুলো থেকে গ্রেপ্তার করে সাজাও দেওয়া হয় পৌনে দুইশ জনকে।

ক্ষমতাসীন দলগুলোর সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাদের মদদে এই ক্যাসিনোগুলো চলছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর র‌্যাবের অভিযান চলে। তবে একে যুবলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন যুবলীগ প্রধান ওমর ফারুক।

আলোচিত এই অভিযানের পর বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকালে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে ফেরার পরও সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরেন তাকে।

অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দারাই এই তথ্য দিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই অপারেশন  হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হল, আমরা শুনছিলাম অনেকদিন ধরে ঢাকাতে কতগুলো অবৈধ ক্যাসিনো ৃ আমরা কোনো ক্যাসিনোর অনুমতি দিইনি। আমরা বিভিন্ন ক্লাব ও হোটেলগুলোতে বারের অনুমতি দিয়েছি, কিন্তু ক্যাসিনোর অনুমতি দিইনি।

তবে আমরা শুনছিলাম, অনেক জায়গায় নাকি ক্যাসিনো চালাচ্ছে। আমাদের কাছে সেই তথ্যগুলো ছিল, সেই অনুযায়ী কাল রাতে সেই ক্যাসিনোগুলো চেক করা হয়েছে। সেই ইনফরমেশনের ভিত্তিতেই হয়েছে।

এতদিন ধরে এই ক্যাসিনোগুলো চলার ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানতেন বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমি সব সময় বলে থাকি। এখানে যদি প্রশাসনের কোনো লোক জড়িত থাকেন কিংবা তারা এগুলোতে সহযোগিতা করেছেন কিংবা তাদের নিয়ন্ত্রণে এগুলো হয়েছে (বলে প্রমাণ মেলে)। অবশ্যই তিনি আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হবেন।

আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, প্রশাসন জানত বা জানত না, আমি সেখানে যাচ্ছি না। আমি বলছি, প্রশাসন যখনই জেনেছে, তখনই অভিযান শুরু করছে।

এতদিন ধরে ক্যাসিনোগুলো চলছিল, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কি জানত না- এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা সাংবাদিক আপনারা সবই জানেন, আমি এর আগে কলাবাগান ক্লাব ও কারওয়ান বাজার হয়েছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যখন যেটার খবর আসছে, তখন আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি, সিলগালা করছি।

ওমর ফারুকের বক্তব্যের বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাননীয় যুবলীগের চেয়ারম্যানের মন্তব্য নিজস্ব মন্তব্য। আমার এখানে কিছু বলার নেই।

যুবলীগের চেয়ারম্যান স্থানীয় পুলিশকে দায়ী করার প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা উনার নিজস্ব মন্তব্য। আপনারা দেখেছেন, আমিও দেখেছি। প্রশাসন তো বসে নেই।

ফকিরাপুর ইয়ংমেনস ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নাম যেমন এসেছে, তেমনি ওই সব ক্লাবে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও বেরিয়ে এসেছে।

এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কে কতখানি ইনভলভ, সেটা তদন্তের ব্যাপার।  আমরা পেয়েছি মাত্র,  আমরা দেখব এখন কে কতখানি সহযোগিতা করেছে, কে কতখানি এটার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো তো তদন্তের পরে আসবে। তদন্তের পরে বেরিয়ে আসবে, কে কোনটার সঙ্গে জড়িত ছিল, কার কতখানি ভূমিকা ছিল।

১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে জুয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি বাংলাদেশের সংবিধানেও জুয়া বন্ধের কথা রয়েছে। তাহলে ক্যাসিনোর সরঞ্জামগুলো কীভাবে দেশে এসেছে- প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ছোট ছোট যন্ত্রাংশ আকারে এসেছে।

এসব জিনিস ডিক্লারেশন দিয়ে আনেনি বলেই তাদের বিচার হবে। যারাই আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের বিচার হবে। ক্যাসিনোগুলো যারা চালাচ্ছিলেন, তারা সরকারের অনুমতি নেননি বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী; যদিও প্রচলিত আইন সংশোধন না হলে অনুমতি দেওয়ার সুযোগও নেই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান নয়, এটা হল অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে, সেটা ক্যাসিনো হোক কিংবা ক্লাব হোক। অবৈধ কোনো কিছু স্থাপন করলেই, আমাদের ব্যবস্থা থাকবে।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *