কৃষ্ণা কাবেরী হত্যার আসামি জহিরুলের ফাঁসির রায়
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
রাজধানীর আদাবরে প্রায় চার বছর আগে কলেজ শিক্ষক কৃষ্ণা কাবেরী হত্যায় গুলশানের একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপক এম জহিরুল ইসলাম পলাশের ফাঁসির রায় দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। প্রায় দুই বছর ধরে বিচারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আসামিকে সর্বোচ্চা সাজার সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক।
এছাড়া দণ্ডবিধির ২০, ৭ ও অন্যান্য ধারায় কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী ও দুই সন্তান কে হত্যা চেষ্টার মাধ্যমে গুরুতর জখম করার অপরাধে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো একবছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। আসামি গুলশানের ব্রোকারেজ হাউজ হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক জহির“ল ইসলাম হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও জারি করেছেন বিচারক।
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ভাড়া বাসায় হামলায় মারাত্মক আহত ও দগ্ধ হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান আদাবরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল (৩৫)।
তার স্বামী সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের উপ-পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি পরিচালক (অপারেশন)। ঘটনার পর তার বড় ভাই সুধাংশু শেখর বিশ্বাস গুলশানের ব্রোকারেজ হাউজ হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম পলাশকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এক বছরের বেশি সময় তদন্ত চালিয়ে ২০১৬ সালের ৩০ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সীতাংশু বিশ্বাস হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। সেখানে আট লাখ টাকা ছিল। শেয়ার ব্যবসার সূত্রেই জহিরুলের সঙ্গে সীতাংশুর পরিচয়। সীতাংশুর শেয়ার আত্মসাৎ করার জন্য তাকে হত্যার চেষ্টা করেন জহিরুল এবং তার হামলায় কৃষ্ণার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করা হয় অভিযোগপত্রে।
সে সময় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর সীতাংশু কুমার বিশ্বাসের ইকবাল রোডের বাসায় তার জন্য জন্মদিনের কেক, মিষ্টি ও মোমবাতি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান জহিরুল । কেক কাটার পর কৌশলে সিতাংশুকে চেতনানাশক মেশানো ফলের জুস খাইয়ে অচেতন করে তিনি হাতুড়িপেটার চেষ্টা করেন। তখন কৃষ্ণা বাধা দিতে গেলে তিনি স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই এলোপাতাড়ি পেটান।
পরে মোমবাতি থেকে কৃষ্ণার শাড়ি ও ঘরে আগুন ছড়িয়ে যায়। দগ্ধ কৃষ্ণাকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কৃষ্ণার দুই মেয়েও হাতুড়ির আঘাতে আহত হয়। গ্রেপ্তারের পরে আসামি জহিরুল বিচারকের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
মামলার বাদী কৃষ্ণা কবেরীর ভাসুর সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, কৃষ্ণার স্বামী শিতাংশু শেখর বিশ্বাস, এই দম্পতির দুই মেয়ে শ্রাবণা বিশ্বাস শ্র“তি, অদ্বিতীয়া আরভি বিশ্বাস অদৃতি, প্রতিবেশী বিপব কুমার বিশ্বাস, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. আবু শামা, মহাখালী মেট্রোপলিটন মেডিকেলের চিকিৎসক মনির হোসেন, আসামির জবানবন্দী গ্রহণকারী হাকিম ঢাকার বতর্মান অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আমিনুল হক, হাকিম এমদাদুল হক, ফায়ার সাভির্সের কমর্র্কতা এম এ আলিম সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলায়।
দুই পক্ষের যুক্ততর্কের শুনানির পর গত ২৩ ডিসেম্বর একই বিচারক মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৩ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী সীতাংশু শেখর বিশ্বাস। রায়ের পর আদালতে তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দণ্ডিতকে গ্রেপ্তার করে দণ্ড কার্যকর করা হোক।