October 7, 2024
জাতীয়

কারখানার বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে ফসল, প্রশাসন চুপ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ঢাকার আশুলিয়ায় একটি ডায়িং কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন অমান্য করে কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি আবাদি জমিতে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী  দিঘীরপাড় এলাকায় ‘জিটিএ স্পোর্টস লিমিটেড’ নামে একটি ডায়িং কারখানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা কারখানা কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কৃষক মোনতাজ মÐল বলেন, এ বছর বোরো মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু ওই কারখানার ময়লা পানি সরাসরি ক্ষেতে প্রবেশ করায় তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শুরুতে ধানের গোছা মোটা ও সবুজ দেখালেও এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ধান ঝরে যায়। পাশাপাশি ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে পোকামাকড়ের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস ও বাজার থেকে কেনা কীটনাশনক দিয়েও ফল মিলছে না। এছাড়া দুর্গন্ধযুক্ত কাদামাটির আধিক্যে গবাদি পশু দিয়ে ক্ষেতে হালচাষসহ স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ, উপজেলা কৃষি অফিসে কথা বলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন মোনতাজ।

একই অভিযোগ করে আরেক কৃষক আমান উল্লাহ বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে বোর ধান চাষ করে এখন তিনি বিপাকে পড়েছেন। জিটিএ কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেওয়ায় তাদের কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।

গত আট-দশ বছর আগেও আমরা বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৩০-৪০ মণ ধান পেতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিঘাপ্রতি মাত্র সাত-আট মণ করে ধান হচ্ছে। লোকসানের কারণে অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।

অনেকেই আবার অন্য পেশার কাজ না জানায় ক্ষতির মুখে বাধ্য হয়েই চাষাবাদ করছেন বলে জানান তিনি।    আমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করতে গেলে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি।

ওই এলাকার আব্দুল খালেক ও সুলতান মিয়া জানান, এক সময় খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখানে মাছ ধরত। কিন্তু কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত পানির কারণে মাছ দূরের কথা, খালে এখন কোনো জলজ প্রাণীও চোখে পড়ে না।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কারখানার এইচআর ম্যানেজার মতিউর রহমান বলেন, কারখানার কেমিকেল মিশ্রিত বর্জ্য ইটিপির মাধ্যমে শোধন করে নির্গত করা হচ্ছে। তবে সরেজমিনে কারখানার পেছনের অংশে বিরাট একটি পুকুরে জমিয়ে রাখা দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি দেখা গেছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো কথা বলেননি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফসলি জমি থেকে খাদ্যচক্রের বিষক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে। তাই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য ইটিপিতে শোধনের পরই যাতে নির্গত করা হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

এমনকি যেসব কারখানা তা অমান্য করে পরিবেশ দূষণ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি। এ ব্যাপারে প্রশাসন এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ডায়িং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *