April 16, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

কাদের বাদ, রওশন বিরোধীদলীয় উপনেতা

কো-চেয়ারম্যানের পর জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উপনেতার দায়িত্ব থেকেও ভাই জি এম কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান স্ত্রী রওশন এরশাদকে এই দায়িত্বে এনেছেন তিনি।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন রওশন।

রওশনকে সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা মনোনীত করে শনিবার বিকালে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন এরশাদ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা এবং পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে জনাব গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অপসারণ করছি। এখন প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদে বেগম রওশন এরশাদকে মনোনীত করা হল’।

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে।

ভাই জি এম কাদেরকে শুক্রবার রাতে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তিনি সংসদে দলের উপনেতার পদে থাকবেন কি না, সে বিষয়ে পার্টির সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এরশাদ।

তবে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নয়জি এম কাদেরকে দল থেকে হটিয়ে দিতে এরশাদ ‘একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ আখতার।

গত ১ জানুয়ারি এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে জি এম কাদেরকে মনোনীত করার কথা জানান। এরপর এরশাদের অনুপস্থিতিতে কাদেরের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাবও দেখিয়েছেন বিভিন্ন সভায়।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জি এম কাদেরও সেই শীতল সম্পর্কেরই আভাস দিয়েছিলেন।

এর আগে ২০১৬ সালেও ভাই কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানে পদ সৃষ্টি করে তাতে স্ত্রী রওশনকে বসান এরশাদ।

তার আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য তখন একবার ভাই কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ।

দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের সঙ্গেও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব পুরনো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দুজন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন খোদ জি এম কাদের।

এই দ্বন্দ্ব নিয়ে জানতে চাইলে খালেদ আখতার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “রওশন ম্যাডাম এখন দলে অ্যাকটিভ আছেন। “

এরশাদ বিভিন্ন বলেছেন, তাকে ‘স্বাধীনভাবে’ রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না।

খালেদ আখতার বলেন, “স্যারকে ফ্রিলি রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। চাপের মুখে পড়েও তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।”

জি এম কাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “যে ভাইয়ের পরিচয়ে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, সেই ভাইকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ জি এম কাদেরের নেই। স্যার সম্পর্কে নানা সময়ে উল্টাপাল্টা কথাও তিনি বলেছেন।”

জাতীয় পার্টিতে সদস্য হয়ে হুট করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বনে যাওয়া, দলের পুরনো নেতাদের টপকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখতিয়ার পেয়ে যাওয়া নিয়ে দলে দেখা দিয়েছে কোন্দল। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর উপস্থিতিতে এ নিয়ে বাহাসে জড়িয়ে পড়েছিলেন নেতারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওয়ান ইলেভেনের আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও নাটক কম হয়নি। প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি ভেড়েন জাতীয় পার্টিতে। পরে তিনি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টাও বনে যান।

তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারেন এ গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে খালেদ আখতার বলেন, “তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে কে কখন আসল, কে কার লোক, ভেতরে ভেতরে কি প্ল্যান আছে, কে জানে? স্যার (এরশাদ) তো আমাদের কারও কথা শোনেন না।”

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *