October 6, 2024
জাতীয়

করোনা আতঙ্কে ঢাবি বন্ধ চান শিক্ষার্থীরা, প্রশাসনের ‘না’

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখনই বন্ধ ঘোষণা না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ৮ মার্চ (রোববার) দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দেয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি তুলতে থাকে। মূলত শ্রেণিকক্ষে লোক সমাগম অনেক হওয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে যুক্তি তাদের।

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলেই গণরুম রয়েছে। যেখানে ছোট কক্ষে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসবাস করে থাকেন।

গণরুমের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, গতবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আমরা দেখেছি। গণরুমের পরিবেশ থাকার উপযোগী না। এতদিন আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছিল না। এখন শনাক্ত হয়েছে। সবার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সচেতন থাকতে। কিন্তু গণরুমে থেকে কীভাবে সচেতন থাকা যায়? এখানে একজন আক্রান্ত হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবাই আক্রান্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এখনই একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সবার আগে দেখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রায় ৩২ হাজার সদস্য সংবলিত ফেসবুকভিত্তিক গ্রæপ স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা ভাইরাস নিয়ে মতামত চেয়ে একটি পোল খুলেছিল। সেখানে দুই হাজার ৫৩৯ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত, ৭০৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ নয় বরং সচেতনতা সৃষ্টি করাটাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ও ১২৬ জন শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যারা, তারা মূলত গুজব ছড়াচ্ছে, আদতে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ অতটা বৃদ্ধি পাবে না বলে মতামত দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাসের জন্য সতর্কতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জুনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি আগাম দেওয়ার কথা ভাবা যায়। সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদের মতে, করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষাপটে এখনই উপযুক্ত সময়। খারাপ কিছু হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা না করলে শিক্ষার্থীরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করার কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। এ হিসেবে রোববার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

অর্থনীতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে চার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার জন্য অনশন শুরু করেছেন শনিবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যার পর থেকে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর, স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদারসহ ডাকসুর প্রতিনিধিরা ক্লাস বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। নুরুল হক নুর বলেছেন, দেশে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও জনাসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে ছাত্র অধিকার পরিষদও মত দিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বানও জানিয়েছে।

পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই গণরুমে থাকেন। গণরুমে একবার এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে সেটি মহামারি আকার ধারণ করবে। এমন শঙ্কা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে যেন কোনোভাবেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য অতিদ্রæত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হোক। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঢাবি পরিবারের সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কোনো সদস্যের সর্দি-কাশি, জ্বর, গলাব্যথাসহ কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন।

এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল অফিসারের প্রচারিত লিফলেটের পরামর্শ অনুসরণ করতেও বলা হয়েছে। এছাড়া, সভায় কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কোনো সদস্য বিদেশ থেকে আসার পর স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় (কোয়ারেন্টাইনে) বসবাস করবেন বলে বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না। এক শিক্ষার্থীর জ্বরের খবর শুনে আমি তাকে দেখতে গিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন, সবকিছু ঠিক আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সচেতন হওয়ার জন্য সেমিনার করা হবে। এছাড়া ফার্মেসি অনুষদ শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ড-স্যানিটাইজার তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে আলোচনা করে নেবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *